Friday, August 14, 2009

দূরসম্পের্কর মেঘ

টোকন ঠাকুর
কবি দাঁড়িয়েছিলেন নদীতীরে। না, তখনও তাকে ঠিক কবি বলা যায় না। নদীতীরে ব্যাধনন্দনে নিহিত সুষমায় পরিভাষা দিলেন যে মানুষ; সেই কবি আজও জল দেখলেই আক্রান্ত হয়ে ওঠেন...। সেসব যদিবা কেবলই ঝাপসা স্মৃতি, যখন কৈবর্তকন্যার ঢেউ থেকে একটি গাঙচিল উড়ে উড়ে কাঁদছিল দুপুরের অনতিদূরে... অথবা বনের সারি সারি বৃক্ষ থেকে পাতা কীরকম ঝরে পড়ে; পাতা কীরকম উড়ে যায়, পাতা আর পাখিসব কীভাবে যে ওড়ে- সেই ধারণার মর্মমূলে পৌঁছাতে পারিনি- অর্থাৎ এতটাই দূরে দূরে দুপুরের পর আলো আরও ম্রিয়মাণ হয়ে এলে ধাবিত তীরের নৌকার মতো, চেয়েছি একবার বনভূমি হব... যেন কোনও দূর প্রতিজীবনের গল্প, প্রণয়ে ব্যাকুল- সেই প্রেম-মৃত্যুকে উপেক্ষা তো অসম্ভব আজ।


প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ১৯৯৯
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
আলোকচিত্র: নাসির আলী মামুন
গ্রন্থস্বত্ব: বীথী আফ্রোদিতি

ISBN 984-8161-69-9

র‌্যামন পাবলিশার্স-এর পক্ষে ২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ থেকে সৈয়দ রহমত উল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত। প্রাইম কম্পিউটার গ্রাফিকস্ প্যারীদাস রোড, ঢাকা-১১০০ থেকে কম্পোজ। সালমানী মুদ্রণ সংস্থা, চৌধুরী মার্কেট নয়াবাজার ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
মূল্য: ৪০.০০ টাকা মাত্র।

নৈবেদ্য
পিতাকে পরম বলি- অন্তরীক্ষ পিতা
মা নিষাদ, মৌলমন্ত্রে মাটি-সংহিতা
দিগন্ত-ধারণায় লভি জন্ম
আমি এইকালে

যথার্থতা

বিষাদে জন্ম মেয়ের
ও কুমারী
আমিও বিষাদ...
আমার কৌমার্যে আমি
বেদনার বরপুত্র,
আ-মরি বিষাদ যদি নাও
শিক্ষাসফরে আজ উড়ে যাব
সম্বিৎ উধাও...

ও তুলোবীজ তন্ত্রদাতা তর্পণে আজ মন
দেখতে দেখতে ফিরে এলাম দগ্ধ ফণায়ন
ভুল ভেঙেছে শত্রুগোলাপ- মহার্ঘ শিমুল
আজ দেখেছি কাশের হাওয়া... কাশ হয়ে যাক চুল

ও তুলোবীজ স্বপ্নবাড়ি-র বেড়া ও ছাদ খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে-
আমি তো ওর সঙ্গে ও তুলোমেঘ ভাই
একলা মেয়ে উড়বে কি গো- বর থাকা তো চাই...

এসব কথা যাকেই বলি যেমন ধুলো... পাখি
পড়শিরা খুব আহত আজ- বিজ্ঞরা চমকালো!
তাতে আমার কী এসে যায় ও সখা শাল্মলী...
মাছির ডানায় উড়িয়ে দিলাম ছোট্ট শহরতলি

ও তুলোবীজ সিদ্ধিদাতা শেকড়বাকড় খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে...

বিস্মৃতিমঙ্গল

আবারও মাঠের দিকে উড়ে গেল মন্ত্রের হাওয়া
সবকথা জড়ো হল শাস্ত্রীয় সন্ধ্যায়
যথারীতি রাত্রিও প্রস্তুত...

একবার, রৌদ্রের প্রতিভা থেকে মনে পড়ল
প্রান্তরের উপকণ্ঠ... রেললাইন
রিলিফ-দৃশ্যের শিল্প...

নদী ও সাঁকোর সঙ্গে বয়ে গেছে দিন-
আমি যে কী দৌড়েছিলাম
ঘূর্ণির হরিণ!

মায়ের ক্ষয়িষ্ণু প্রাণে- ছোটঘরে
কী অন্যূন- আয় আয় আয়
ক্বাথের প্রসিদ্ধি-

গোপনে বালিশ উসকে দিয়েছে যে তুলো...

ধারণা করছি- কারও কারও মতো
এলফের শিশু জানে দ্রোহীপূর্ণিমার পাঠ
ও শাস্ত্রীয় সন্ধ্যার মাঠ!

আবারও এসব অঙ্গারবাসনা
নক্ষত্রসংলাপ?
বন্ধ করো বন্ধ করো হে বিস্মৃতিকল্যাণ-

আমি আর কুড়োবো না প্রতিভার পাপ...

কাহিনী

এ জন্যে তো আজও কিছু বাক্য লেখা হয়

একটা জানালা
পাশের বাড়ির
ফিরে পাওয়া সান্ধ্যনদী
কবেকার মাঠ
কলহপ্রবণ মেঘ...

আর আমাদের বোন, ওই ছোট ছোট গ্রাম
বিরহ রাত্রির পরে ভ্রাতৃত্যের মাঠ ভেঙে
চলে গেল কাঁসর বাজিয়ে...

তার জন্যে আছে কিছু মৌনতা রচিত

তৃণবনে হারাল যে নাকছাবি
শমীবৃক্ষে আরও দূর
ডানা-নির্ভরতা
আর উড্ডিন প্রস্তাবনা নিয়ে যে অঙ্গুরিয়-পঙক্তি
নদীর সমীপে নিহিত
জলের চাকায় ঘোরে
এরও জন্যে বিশ্লেষণ অপেক্ষায় থাকে...

গ্রাম থেকে মাঠগুলি কতদূর বিভাজিত
এক রাতে সেই গ্রাম ভেঙে দূরে চলে যায়

তুলনামূলক

জমানো কৈশোর, আজও জ্যামিতি শেখালে না

ঘরে তবু রয়ে গেল কৌণিক বসতি
জানালা দরোজা টেবিল...
ব্যাসার্ধের দিনগুলি কোন বৃত্তে বিপর্যস্ত হল!

বগিতে বগিতে চেপে চলে গেল সরলরেখার গ্রাম
মায়াকাহিনীর মাঠ
ও জ্যামিতি বক্সের চাঁদ
তোমাতে ধরেছে জং তোমাতে জমেছে ধুলো-
হাতে লেখা হৃদয়ের রক্তপাতগুলো...

ধূসরপ্রান্তিক, আজও পরিপ্রেক্ষিত শেখালে না

শুধু
শিক্ষাজ্ঞানে রয়ে গেল কয়েকটি অক্ষর,
ও মাইল মাইল পঙক্তি
প্রতিবেশী প্রান্তরের নীল!
যখন, মনও হয়েছে মোবাইল
তবু উধাও মৈষাল;

ও রেল ও সমান্তরাল...

খসড়া নির্বাণ

সজনীরা আজও সঙ্গ দেয়
সজনীরা দেয় নুন!
সজনীরা সন্নিহিত ছুঁড়েছিল তূণ...

এ রাতে, রোমন্থন এত আর্দ্রতাবিলাসী
তা না হলে দূর সমুদ্রের জলে
উৎসাহী মানুষেরা যায়?

পিতা যথা ঘেমেছিল, সে রাতে কি বর্ষা নেমেছিল?
তা না হলে আমি এই লবণাক্ত হ্রদে ফের
ধাবিত কল্লোল তুলে
অশ্রুপাত করি?

সমাগত আলপথ, শোনো
এই যে মাঠে মাঠে এত মুরলিয়া
মাঠস্থ প্রণয়-

আমার জন্মের পাশেই জন্ম
ফুটফুটে নীল বন
সজনীরা, বোঝো, এত নির্বেদে এত অভিনিবেশী
রোমন্থন,
তা না হলে শুধু এই জলের পাশেই
শ্মশান... দেহান্ত হয়?

সজনীরা শোনো, সেই শাদা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আজও রক্ত ঝরে পড়ে
খণ্ডকালীন কুরুক্ষেত্রে
আর লালিত্যবিলাসে ওড়ে লুব্ধ লোধ্রালয়
সেই ঘাম-নুন... ভস্মরোগে তবু ফের ভ্রুণস্থ প্রশ্রয়?

দিনাজপুর

এই যে মনে হাওয়া, এর সঙ্গে ধানক্ষেত জড়িত রয়েছে

আজ হয়তো অবমর্ষে লুকোনো পত্রের মাধুরী এসে বৃষ্টিতে উন্মাদ-
সম্প্রসারিত হয়ে ওঠা আবছায়া-মল্লার, এর সঙ্গে বিনাশের সম্পর্ক রয়েছে
আর আমার কেবলই মনে হচ্ছে- একবার দিনাজপুর গিয়েছিলাম...

ওখানে, অন্তত ধানক্ষেতের উপর দিয়ে ছুটে, লুটে যাওয়া দিনান্তের ঢেউ
অন্তত একটি শাড়ির শোভনায়, অন্তত গ্রামীণ বাতাসে রোপিত মদির
আজ এই পোড়োরশ্মির প্রান্তবেলায়
পুনর্বার ত্রস্ত হয়ে ওঠে-
এর সঙ্গে কান্তজীর, এর সঙ্গে টেরাকোটা-স্মৃতি-সামগ্রির সম্পর্ক রয়েছে

বহুকাল বুলিয়ে গেল বহ্নির আদর
বহুদিন উড়িয়ে দিল উৎকর্ষ পালক
মনে হয়, আমি কোনো অভিধানে বন্দি শুধু কয়েকটি অক্ষর-

এই যে মনে হওয়া, এর সঙ্গে আর্তভাষা সংসার পেতেছে!

তা না হলে স্টিমারমাত্রেই আমি বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌঁছে যাই?
তা না হলে প্লাবন মানেই আমি কাঞ্চন নদীর তীরে বসে পৃথিবীর
দ্ব্যর্থ-দুর্গা দেখি?

চিত্রিত ধ্বনির কাছে পুনর্বার ব্যক্ত করি দূরত্ব ডিঙিয়ে যাওয়া আমার উদারা
বৃক্ষহীন পাখিপুঞ্জ, অন্তত সালিম আলি ব্যর্থ যেখানে, প্রতিভাত সে তীর্থ প্রান্তরে
যখন পৌঁছে দেখি বহুদূরে নক্ষত্রের ইশারা, বহুদূরে মানুষের গ্রাম-

এই যে লুব্ধ হাহাকার, এর সঙ্গে শাদা পৃষ্ঠার সমিল রয়েছে!

তাই দু’একটি বাবুই প্রতিদিন পড়তে পড়তে কী প্রকার ঝুলে থাকে?
আজও হয়তো সার্বভৌম হয়ে উঠবে নিখিল-বিষাদ
এর সঙ্গে আহত হওয়ার যাথার্থ্য রয়েছে
আর আমার কেবলই মনে পড়বে- একবার দিনাজপুর গিয়েছিলাম...

মৃতকথা

এপারে গ্রীষ্মিত ঢেউ, ঝাঁপিতে দুপুর
নখের প্রতিভা থেকে বিকশিত ক্ষুর

মস্তিষ্কে মোমের আলো- মোম নাকি ভাণু
তাকেই জোছনা ভেবে যে পেতেছে জানু

সে বড় ভ্রমের চিহ্ন- বিবাহিত রাত
বিস্ময় আনিল স্বয়ং স্তনে প্রভাত

আমার স্বভাব ব্রাত্য, অভাবের তরে
চরণে মুদ্রিত মেধা- ধুলোর শহরে

এ বড় ভ্রমের শীর্ষ- কারুপণ্য পাপ
হঠাৎ হাওয়ার ফণা, চুমু দেয় সাপ

সর্পস্থ পঙক্তি ছুঁয়ে উড়ছে ফড়িঙ
বিদুরতা থেকে লিখি- মৃত বহুদিন...

মৃত এ হরিৎ হাওয়া- মৃত বালুভূমি
যে কোন জন্মের পাশে মৃত আমি তুমি

লিপিকৌশল

লিপিকৌশলে জানা হল আজ
মাইল মাইল দূরে
টুকরো আয়না
জোড়া-ডানা পেয়ে
বিশ্রম্ভে যায় উড়ে...

অথচ কাহিনী চিত্রিত এই দিনে আমি ঠিকই বয়ে যাই আর
অনীহামুখর পৃষ্ঠা উড়িয়ে বাক্যহীন ধূলিচন্দনে নন্দনে
উদ্বৃতির উধাও প্রান্তিকে একা, আলপথে
ক্রন্দন-আসন্ন যত গান ছুঁয়ে থাকি-
বলো, অক্ষরপূর্বক অগ্নি হয়তো পাঠাতে পারিনি
তোমাদের খড়োঘরে...

আর তুমি এতটাই চৈত্রে রচিত হাওয়া
যে- আমি এখনও ঋতুভেদ শিখিনি আহা
কখন বৃষ্টি... কখন শেফালি ঝরে?

ফলে, ছোবল জেনেছি, বৃষ্টি নিপুণ পারমাণবিক ফোটা
যে কোনও লাবণ্য (ফুলে প্রামাণ্য)
তাড়িত রোদের কণা,
আর আমি দূর বনে লুকনো সবুজ শিশু
বর্ণের অজ্ঞাতে যত মরাঝরাপাতা গ্রহণের দায়ে
অধ্যয়নে অপারগ আজও মর্মর কুড়িয়ে ফিরি-
বলো, পঙক্তিপূর্বক মুদ্রা হয়তো পাঠাতে পারিনি
তোমাদের বিপণিতে...

আর তুমি এতটাই বিজ্ঞাপন- নির্মিতঅধরা
যে- আমি এ বনের শাখাপ্রশাখায় হাওয়াতে হরণ, হরা-
তাই কুণ্ঠিত, থাকি স্বর-ব্যঞ্জনহীন
না-লেখালেখিতে...

অসহায়ত্ব

কমা দাঁড়ি কোলন সভায়
আমাকে ডাকলে বৃথা
আশ্চর্য জিজ্ঞাসা!
ওহে যতিমোড়লের ছানা

আজ আমি আরও পেছনে রেখে যাব ঘরবাড়ি
আজ আমি চিনব না তবু দেখব- না দেখা অপর!
ওই যে মেয়েটি- দাঁতের উপরে দাঁত
ওর বাম হাত
নেই কেন?
প্রৌঢ়াবাড়ির একলা মানুষ অমন তাকাল
দ্যাখো
অ্যালবাম ভর্তি ভোর...

যদিও সন্ধ্যা যদিও বর্ষা যদিও এখনও
বকশিকারিরা ফিরেও যায়নি ঘরে

আর আমি শুধু যেতে চাওয়া আর প্রেতে পাওয়া
এক প্রকার শরীরী হাওয়া
মুহূর্তে নিহিত অতীত-
একটু না হয় দেখতে এলাম উনুনের পাশে শীত...

এইটুকু দাও ভৌগলিকী, সার্বভৌম ক্ষতি
আমাকে কেন ডাকলে বৃথা
যত্রতত্র
গোত্রপতি যতি?

স্বীকারোক্তি

আদর্শ নদীর কাছে সমর্পণ শিখতে এসেছি!

ইতিপূর্বে, নদীমাত্র জলভ্রমে ডুবতে ডুবতে
এতবার আর্দ্র হল গান, এত পৃষ্ঠা গেল উড়ে
আমি ঠিক বোঝাতে পারার আগেই বোকা হয়ে যাই...

অতএব, আবিষ্কার আমাকে এড়িয়ে গেছে, দূরে-
সন্তরণ, দূরে-প্রান্তরণ, দূরে-ঠাকরুণ ঢেউ,
কিন্তু আমার গমন হাওয়া এমন কেন হল?
বক্ররেখাকে আমার বাসনা কে জানিয়ে দিল?

যেখানে বিস্ময় বিবসনা বুক নিয়ে দাঁড়িয়েছে,
সঙ্গত আমার ব্যস্তভাব; অমনি তাকালো গ্রন্থ
বিধি বক্রসকল... ফলে, খাদে পড়ে গিয়ে দেখি
আমারই বীর্যের ক্বাথে হ্রস্ব ড্রেন পরিব্যাপ্ত বটে;

আর লিপি-উদ্ভাবক, একটি কবিতা-সৃষ্ট শ্লাঘা
নিয়ে ঘুমোতে গেলেও, আর আমি ক্রমাগত কবি
হয়ে উঠতে উঠতে নদী অন্বেষণ... সমর্পণ
ইত্যাদি শব্দের জন্যে জলভ্রমে ড্রেনে ভেসে যাচ্ছি...

Thursday, August 13, 2009

নিদ্রাপ্রহরা

এরকম ঠিক নয়, এ তো আমি চাইনি বোঝাতে
তোমার আঙুলে আমি ঈশ্বর দেখেছি কালরাতে
-শঙ্খ ঘোষ
অপারগতায়ও কি কি পারা যায়? যা জানে ডায়েরি
লঞ্চ ছেড়ে গেলেই বুঝেছি কাকে বলে দূর... দেরি-

এ রকম ঠিক নয়, এ তো আমি চাইনি বোঝাতে
হয়তো ব্যয়িত হবার কথা ছিল অন্য কোনো খাতে

তাহলে যে ধর্ম-সংকট? নিদ্রাপ্রহরা দিতে
দুরূহ রাতের গল্প লিখে রাখি প্রতিপৃথিবীতে

অর্তাৎ এই জলের সূত্র- এই যে ভৌগলিকী
খেলতে খেলতে কবে হারিয়ে ফেলেছি সিকি...

তুমিও সিকির মতো- সিকিসূত্রে গড়িয়েছে কবে...
এপথে ওপথে খুঁজে আমি যাই সপ্তঋষিভবে

এসব অপারগতা; যবে ঘরে ফিরে এঁটে দিই খিল
নিদ্রাপ্রহরা দিতে ওড়ে পাতা পাতা স্লিপিং পিল...

চিরকালীন

কে কত প্রতিভা কুড়োবে
প্রতিদিন মেধার কুহকে?
কে কত প্রতিভা ফোটাবে আজ
শষ্পে ও সমুদ্রে?- জানি
এখনও ভোরের গল্পে উল্লেখ্য শিশির...

সংগোপনে সব হবে শুধু সংসার হবে না!

বাঙলা কবিতা মুখ্য
গীতি বেদনায়
প্রতিভা পীড়িত করে তুমি পাঠ্য মর্মের পঙক্তি...
পথের সামান্য ধুলো
কিছু নয়
তবু তৃণ হীনগান
শরণার্থী স্মৃতিগুলো-
অক্ষরে অক্ষরে শব্দ হয়... বাক্য হয়... বিলাপে বিলাপে

তোমার মহিমা এই
দিনে দিনে
পাঠ্য হয়ে পূর্ণ তুমি বিভিন্ন বালিশে!- তবু
তখনও সন্ধ্যার বাঁধে নির্জন মাধুরি!...
বিম্বিত বিদুর

মনে রাখি, তুঁ হুঁ মম...

পরস্পর

০১.
কে জানিত, নদীও আমার মতো
অপমানিত হবে?

ছিলে জল, পাত্রে পাত্রে ঘুরে
নদীবিনোদিনী- দর্শক এলই বুকে
ঢেউ তুলে লাবণ্য দেখাও...

আমিও পিতার মতো- আমিও পুরুষ
ঝাঁপিয়ে পড়েছি জলে, নদীতে আমার নাম
লিখে যদি আখ্যান হওয়া যায়...

কী আশ্চর্য! নদী থেকে উঠে এলে আজ
যেহেতু ডেকেছে পাথর, প্রেমিকসুলভ চোখে
এ মনোময় নগরকোঠার দিন...

০২.
পাত্রে পাত্রে ঘোরে তাই শাস্ত্রমতে
নদী তাকে দিয়েছিল জলের সম্ভ্রম,
নদী তাকে বলেছিল- পিঠেপিঠি বোন

যেহেতু পিতার মতো- আমিও এখন
মরুভূমি ভালোবাসি! হে তৃষ্ণাহীন হে তাঁতার, তবে
কে জানিত একদিন, নদীও আমার মতো
অপমানিত হবে?

০৩.
জল-অঙ্গে যে কাহিনী লেখা আজও মাতৃ-স্ত্রী কূলে
ফুলে উঠছে, ফুলে...

রোমন্থন

হুমায়ুন কবির- মনে আছে উড়নচণ্ডির মাঠে গোধূলিবাল্যের দিন?
ও বাড়ি, চলো বেড়াতে যাই
বাইরে ব্যাপক দিন-
পুস্তক থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বর্ণমালার ফড়িঙ...

ঘুমিয়ে ছিল যা যযাতি গল্প
মলাটে দেবীত্ব... অদূরে পন্নগ... ইত্যাদি প্রবাহ
অর্থাৎ এই দেহেই জমেছে শ্রেষ্ঠতম যা দাহ

তাহলে চলো না ও বাড়ি
আজকে
বেড়াতে বেরোই মাঠে!
ওই তো যেখানে নীলচে নোঙর ঘাটে...

ওখানে লিখব চাকার জীবনী
চরৈবতি ও
দূর দূর মহাদেশ-
এখনও উড়ছে সেই সাইকেল... রুগ্ন, ভগ্নাবশেষ...

নিদ্রাহীনতার গান

পরিভ্রমণের শেষে লিখি এই লুপ্ত দিনলিপি!

পুষ্পের আড়ালে পরাগপন্থি ভোর
শাড়ি শুকোবার অপরাহ্নে
আর কী কী ভেজা ছিল-
উচ্চজ্ঞানে মৌন হয় সন্ধ্যার তাৎপর্য...

কেননা, আয়না-নগরে যেতে যেতে মনে পড়ল
আমি কিছু স্বপ্ন এবং মুদ্রা তো ফেলে এসেছি-
পরন্তু, দ্বিতীয় যন্ত্রণার জন্য আমি কোনো
শাড়িও খুলিনি!
অতএব সংক্রমণযোগ্য এই ফেরার পিপাসা...

পরিত্যক্ত রাজবাড়িতে আজ কি কি আছে...?
শ্যাওলার মতোন স্মৃতিজল কেবলই সুদূর...?
কখন আমি সেই কয়েকটি অক্ষর শেষবার দেখেছি-

এসব ভাবতে ভাবতে এই ভাঙাপূর্ণিমায়
সার্বভৌম হয়ে উঠছে নিদ্রাহীনতার গান...

মর্মান্বেষীলিপি

নজরুল কবীর; একা যে অনেক দূরের চূড়ো- বন্ধু
যে সব জলের পাখি
বিব্রত; করে
বিলে যেতে অনীহা প্রকাশ-
লুকোনো কলস ভেঙে
তাকে দিই
অশ্রু প্রলোভন
আর
ডিঙিঢেউ, দ্যাখো আমি শিখেছি কম্পন...

আর যাকে ভস্ম বলে শীর্ষগান করি
ও মূর্ছিত পুত্ররা
শোনো, যে কোনো বনের নিদ্রা ভেঙে দূর পল্লবকীর্তন
যদি ভেসে ভেসে আসে
আর
এ সবুজ শষ্পে লুপ্ত তীর্থের সন্ধানে
ও অনতিতরুণ মেঘ
প্রতত যন্ত্রণা থেকে কিছু মরাল উড়িয়ে ফের
আমি যদি ফিরে আসি
তবে কি দেখব বৃষ্টি, আর্দ্র ডানা?

কবি বলছেন- ‘নারীরা ফেরে না’

যেসব কাঠের ঘোড়া
কুণ্ঠিত;
অদূরে দাঁড়িয়ে দ্যাখো
ধুলোপ্রাণ পার্বণ-মেলায়
যদৃচ্ছা পরিধি ছিঁড়ে
তাকে দিই
অভ্র-বিসর্জন
আর
পোড়া চোখ, দ্যাখো আমি শিখেছি সাঁতার

আর যাকে অশ্রু বলে শীর্ষঢেউ বলো
পুরনো দিনের গান সব চিত্র রীতি শিখে
প্রতিকৃতি হয়ে উঠছে জলে; সেই
জলের পাখি,
যারা বিলে যেতে অনীহা প্রকাশ
করেছিল

আজ থই থই, ভাসমান!... লুকোনো কলস ভেঙে...

উদ্বৃত্ত প্রাণের গান

মাসুদ সেজান ও মীর মাসরুর জামান রনি; আবৃত্তিশিল্পীদ্বয়
আরও একটু দেখে নিতে নিতে নিভে এল পতেঙ্গা-অপেরা আর
আরও একটু রঙিন কাহিনী ধরতে ধরতে ধরে ফেললাম চাঁদ!
সমুদ্র বেশ মনে ধরেছিল- তাই, আমরা কেবলই যে যার
আর আমরা আরও একা একা আর একে অপরের খাদ!

পাহাড় পেরুলে যে বাঁকে বাসনা, অধরা ও কালের চৌকাঠ
আমরা কি ইমব্যালান্সড, যে কাষ্ঠ-পুষ্পে প্রণতি জানাতে চাই?
যে কোন উঠোন, ঘরবাড়ি ভেঙে করেছি নিপুণ মাঠ
মাঠের শিয়রে আকাশ যেহেতু আমাদের নীলগাই...

আরও একটু ছুঁয়ে যেতে যেতে ছুঁয়ে ফেললাম চূড়ো
আরও একটু পরেই পাহাড়, ভেঙে ধুলোময়- গুঁড়ো গুঁড়ো...

আরও

অন্তত গনী আদম জানে, একটি রাত ছিঁড়ে ছিঁড়ে কীভাবে অজস্র হয়
আরও চাইছি অঝোর আজ আরও চাইছি বাতাস
ও ধুলোমন স্বপ্নউঠোন দ্যাখো স্থানীয় আকাশ!
উধাও মাঠের সিঁথি ও ধু ধু, আকাশ তবু কী স্থানীয়
উদ্বৃত্ত সেই বাড়ি কি আছে, অমা হে আমাকে জানিও...

যেহেতু এখনও আমি আর অমা চাইছি ষড়ৈশ্বর্য
চাইছি ৯কার কাঠবিড়ালি ও বিস্মৃতিপ্রবণ ফর্দ!

আরও যে অঝোর ঘ্রাণ, অঙ্গজলে যাযাবর সাঁকো
ও ধুলোবন উড়ে যাওয়া সব খড়কুটো আজ ডাকো!

কেননা বহুকাল আগেই আমি লিখেছি যে কবিতা
জলে শুয়েছিল চাঁদ- অপবাদে হয়ে গেল চিতা!
আরও সেই স্কুল-ফ্রক কীভাবে যে হয়ে গেল শাড়ি
আমি আর অমা চাইছি অনঘ উদ্বৃত্ত নীলবাড়ি...

প্রতিবেশী মেঘ, মুরলি আবেগ- অগ্নিমন্ত বিভা
আরও চাইছি চিতা- চাঁদ মৃত, মৃত আলোর প্রতিভা...

Wednesday, August 12, 2009

চুড়িগান

ক.
গৃহিণীর চুড়িতে এ গল্পের বিস্তৃতি
চুড়িতে কিসের চিহ্ন? কবেকার স্মৃতি?

সে বার দুর্গার দিনে, মেলা থেকে কেনা
এই চুড়ি, কী কারণে এত বেশি চেনা
নাই বলি, তবু বিসর্জনের রাতে
চুড়ি হয়ে পৌঁছলাম চুড়িনীর হাতে...

আমার আত্মার ধর্ম- আশ্চর্য শিরীষে
যেতে পারি যন্ত্রণারও নাভিকেন্দ্রে মিশে।
পূর্বেও প্রমাণ আছে- মৃগশীর্ষ বনে
ছিলাম মরীচি পুত্র, আদিতে গোপনে
কখনও; আশ্বিন এলে কাশের কবিতা
ভালোবেসে ফিরে আসি, রক্ত-সংহিতা...

খ.
শাস্ত্রপাঠে গেল মন- মন গেল উড়ে
ঠাঁই বসে দেখি সব পথ ভবঘুরে

হঠাৎ ঘুমুতে যাব- ঘুম এক নারী
কেবল জাগিয়ে রাখে, সহিতে না পারি
এ বড় মৌন লড়াই, লগ্ন-মায়াপুরী
গল্পের শুরুতে ছিল গৃহিণীর চুড়ি...

গ.
তো, চুড়িও হয়েছি সেই চুড়িনীকে ছুঁতে
যেহেতু আত্মা শ্রাবণে- গিয়েছে মরুতে
চুড়িনীর হাতে ছিল স্রোতল তারিণী
আমার আত্মার পাশে বাজে রিনিঝিনি...

শীর্ষ সেই চুড়িগাণ, চুড়িঅন্তঃপুর
গৃহিণীর গ্রাম ছেড়ে পড়ে আছে শ্রীমতি গলিতে...

ঙ.
তবে কি চুড়িই মুখ্য? নাকি সেই হাত?
বদলে যা দিয়েছিল দৃশ্য... ধারাপাত?