Friday, August 14, 2009

দূরসম্পের্কর মেঘ

টোকন ঠাকুর
কবি দাঁড়িয়েছিলেন নদীতীরে। না, তখনও তাকে ঠিক কবি বলা যায় না। নদীতীরে ব্যাধনন্দনে নিহিত সুষমায় পরিভাষা দিলেন যে মানুষ; সেই কবি আজও জল দেখলেই আক্রান্ত হয়ে ওঠেন...। সেসব যদিবা কেবলই ঝাপসা স্মৃতি, যখন কৈবর্তকন্যার ঢেউ থেকে একটি গাঙচিল উড়ে উড়ে কাঁদছিল দুপুরের অনতিদূরে... অথবা বনের সারি সারি বৃক্ষ থেকে পাতা কীরকম ঝরে পড়ে; পাতা কীরকম উড়ে যায়, পাতা আর পাখিসব কীভাবে যে ওড়ে- সেই ধারণার মর্মমূলে পৌঁছাতে পারিনি- অর্থাৎ এতটাই দূরে দূরে দুপুরের পর আলো আরও ম্রিয়মাণ হয়ে এলে ধাবিত তীরের নৌকার মতো, চেয়েছি একবার বনভূমি হব... যেন কোনও দূর প্রতিজীবনের গল্প, প্রণয়ে ব্যাকুল- সেই প্রেম-মৃত্যুকে উপেক্ষা তো অসম্ভব আজ।


প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ১৯৯৯
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
আলোকচিত্র: নাসির আলী মামুন
গ্রন্থস্বত্ব: বীথী আফ্রোদিতি

ISBN 984-8161-69-9

র‌্যামন পাবলিশার্স-এর পক্ষে ২৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ থেকে সৈয়দ রহমত উল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত। প্রাইম কম্পিউটার গ্রাফিকস্ প্যারীদাস রোড, ঢাকা-১১০০ থেকে কম্পোজ। সালমানী মুদ্রণ সংস্থা, চৌধুরী মার্কেট নয়াবাজার ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
মূল্য: ৪০.০০ টাকা মাত্র।

নৈবেদ্য
পিতাকে পরম বলি- অন্তরীক্ষ পিতা
মা নিষাদ, মৌলমন্ত্রে মাটি-সংহিতা
দিগন্ত-ধারণায় লভি জন্ম
আমি এইকালে

যথার্থতা

বিষাদে জন্ম মেয়ের
ও কুমারী
আমিও বিষাদ...
আমার কৌমার্যে আমি
বেদনার বরপুত্র,
আ-মরি বিষাদ যদি নাও
শিক্ষাসফরে আজ উড়ে যাব
সম্বিৎ উধাও...

ও তুলোবীজ তন্ত্রদাতা তর্পণে আজ মন
দেখতে দেখতে ফিরে এলাম দগ্ধ ফণায়ন
ভুল ভেঙেছে শত্রুগোলাপ- মহার্ঘ শিমুল
আজ দেখেছি কাশের হাওয়া... কাশ হয়ে যাক চুল

ও তুলোবীজ স্বপ্নবাড়ি-র বেড়া ও ছাদ খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে-
আমি তো ওর সঙ্গে ও তুলোমেঘ ভাই
একলা মেয়ে উড়বে কি গো- বর থাকা তো চাই...

এসব কথা যাকেই বলি যেমন ধুলো... পাখি
পড়শিরা খুব আহত আজ- বিজ্ঞরা চমকালো!
তাতে আমার কী এসে যায় ও সখা শাল্মলী...
মাছির ডানায় উড়িয়ে দিলাম ছোট্ট শহরতলি

ও তুলোবীজ সিদ্ধিদাতা শেকড়বাকড় খুলে
আমার মেয়ে পড়তে যাবে উড়ন্ত ইশকুলে...

বিস্মৃতিমঙ্গল

আবারও মাঠের দিকে উড়ে গেল মন্ত্রের হাওয়া
সবকথা জড়ো হল শাস্ত্রীয় সন্ধ্যায়
যথারীতি রাত্রিও প্রস্তুত...

একবার, রৌদ্রের প্রতিভা থেকে মনে পড়ল
প্রান্তরের উপকণ্ঠ... রেললাইন
রিলিফ-দৃশ্যের শিল্প...

নদী ও সাঁকোর সঙ্গে বয়ে গেছে দিন-
আমি যে কী দৌড়েছিলাম
ঘূর্ণির হরিণ!

মায়ের ক্ষয়িষ্ণু প্রাণে- ছোটঘরে
কী অন্যূন- আয় আয় আয়
ক্বাথের প্রসিদ্ধি-

গোপনে বালিশ উসকে দিয়েছে যে তুলো...

ধারণা করছি- কারও কারও মতো
এলফের শিশু জানে দ্রোহীপূর্ণিমার পাঠ
ও শাস্ত্রীয় সন্ধ্যার মাঠ!

আবারও এসব অঙ্গারবাসনা
নক্ষত্রসংলাপ?
বন্ধ করো বন্ধ করো হে বিস্মৃতিকল্যাণ-

আমি আর কুড়োবো না প্রতিভার পাপ...

কাহিনী

এ জন্যে তো আজও কিছু বাক্য লেখা হয়

একটা জানালা
পাশের বাড়ির
ফিরে পাওয়া সান্ধ্যনদী
কবেকার মাঠ
কলহপ্রবণ মেঘ...

আর আমাদের বোন, ওই ছোট ছোট গ্রাম
বিরহ রাত্রির পরে ভ্রাতৃত্যের মাঠ ভেঙে
চলে গেল কাঁসর বাজিয়ে...

তার জন্যে আছে কিছু মৌনতা রচিত

তৃণবনে হারাল যে নাকছাবি
শমীবৃক্ষে আরও দূর
ডানা-নির্ভরতা
আর উড্ডিন প্রস্তাবনা নিয়ে যে অঙ্গুরিয়-পঙক্তি
নদীর সমীপে নিহিত
জলের চাকায় ঘোরে
এরও জন্যে বিশ্লেষণ অপেক্ষায় থাকে...

গ্রাম থেকে মাঠগুলি কতদূর বিভাজিত
এক রাতে সেই গ্রাম ভেঙে দূরে চলে যায়

তুলনামূলক

জমানো কৈশোর, আজও জ্যামিতি শেখালে না

ঘরে তবু রয়ে গেল কৌণিক বসতি
জানালা দরোজা টেবিল...
ব্যাসার্ধের দিনগুলি কোন বৃত্তে বিপর্যস্ত হল!

বগিতে বগিতে চেপে চলে গেল সরলরেখার গ্রাম
মায়াকাহিনীর মাঠ
ও জ্যামিতি বক্সের চাঁদ
তোমাতে ধরেছে জং তোমাতে জমেছে ধুলো-
হাতে লেখা হৃদয়ের রক্তপাতগুলো...

ধূসরপ্রান্তিক, আজও পরিপ্রেক্ষিত শেখালে না

শুধু
শিক্ষাজ্ঞানে রয়ে গেল কয়েকটি অক্ষর,
ও মাইল মাইল পঙক্তি
প্রতিবেশী প্রান্তরের নীল!
যখন, মনও হয়েছে মোবাইল
তবু উধাও মৈষাল;

ও রেল ও সমান্তরাল...

খসড়া নির্বাণ

সজনীরা আজও সঙ্গ দেয়
সজনীরা দেয় নুন!
সজনীরা সন্নিহিত ছুঁড়েছিল তূণ...

এ রাতে, রোমন্থন এত আর্দ্রতাবিলাসী
তা না হলে দূর সমুদ্রের জলে
উৎসাহী মানুষেরা যায়?

পিতা যথা ঘেমেছিল, সে রাতে কি বর্ষা নেমেছিল?
তা না হলে আমি এই লবণাক্ত হ্রদে ফের
ধাবিত কল্লোল তুলে
অশ্রুপাত করি?

সমাগত আলপথ, শোনো
এই যে মাঠে মাঠে এত মুরলিয়া
মাঠস্থ প্রণয়-

আমার জন্মের পাশেই জন্ম
ফুটফুটে নীল বন
সজনীরা, বোঝো, এত নির্বেদে এত অভিনিবেশী
রোমন্থন,
তা না হলে শুধু এই জলের পাশেই
শ্মশান... দেহান্ত হয়?

সজনীরা শোনো, সেই শাদা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আজও রক্ত ঝরে পড়ে
খণ্ডকালীন কুরুক্ষেত্রে
আর লালিত্যবিলাসে ওড়ে লুব্ধ লোধ্রালয়
সেই ঘাম-নুন... ভস্মরোগে তবু ফের ভ্রুণস্থ প্রশ্রয়?

দিনাজপুর

এই যে মনে হাওয়া, এর সঙ্গে ধানক্ষেত জড়িত রয়েছে

আজ হয়তো অবমর্ষে লুকোনো পত্রের মাধুরী এসে বৃষ্টিতে উন্মাদ-
সম্প্রসারিত হয়ে ওঠা আবছায়া-মল্লার, এর সঙ্গে বিনাশের সম্পর্ক রয়েছে
আর আমার কেবলই মনে হচ্ছে- একবার দিনাজপুর গিয়েছিলাম...

ওখানে, অন্তত ধানক্ষেতের উপর দিয়ে ছুটে, লুটে যাওয়া দিনান্তের ঢেউ
অন্তত একটি শাড়ির শোভনায়, অন্তত গ্রামীণ বাতাসে রোপিত মদির
আজ এই পোড়োরশ্মির প্রান্তবেলায়
পুনর্বার ত্রস্ত হয়ে ওঠে-
এর সঙ্গে কান্তজীর, এর সঙ্গে টেরাকোটা-স্মৃতি-সামগ্রির সম্পর্ক রয়েছে

বহুকাল বুলিয়ে গেল বহ্নির আদর
বহুদিন উড়িয়ে দিল উৎকর্ষ পালক
মনে হয়, আমি কোনো অভিধানে বন্দি শুধু কয়েকটি অক্ষর-

এই যে মনে হওয়া, এর সঙ্গে আর্তভাষা সংসার পেতেছে!

তা না হলে স্টিমারমাত্রেই আমি বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌঁছে যাই?
তা না হলে প্লাবন মানেই আমি কাঞ্চন নদীর তীরে বসে পৃথিবীর
দ্ব্যর্থ-দুর্গা দেখি?

চিত্রিত ধ্বনির কাছে পুনর্বার ব্যক্ত করি দূরত্ব ডিঙিয়ে যাওয়া আমার উদারা
বৃক্ষহীন পাখিপুঞ্জ, অন্তত সালিম আলি ব্যর্থ যেখানে, প্রতিভাত সে তীর্থ প্রান্তরে
যখন পৌঁছে দেখি বহুদূরে নক্ষত্রের ইশারা, বহুদূরে মানুষের গ্রাম-

এই যে লুব্ধ হাহাকার, এর সঙ্গে শাদা পৃষ্ঠার সমিল রয়েছে!

তাই দু’একটি বাবুই প্রতিদিন পড়তে পড়তে কী প্রকার ঝুলে থাকে?
আজও হয়তো সার্বভৌম হয়ে উঠবে নিখিল-বিষাদ
এর সঙ্গে আহত হওয়ার যাথার্থ্য রয়েছে
আর আমার কেবলই মনে পড়বে- একবার দিনাজপুর গিয়েছিলাম...

মৃতকথা

এপারে গ্রীষ্মিত ঢেউ, ঝাঁপিতে দুপুর
নখের প্রতিভা থেকে বিকশিত ক্ষুর

মস্তিষ্কে মোমের আলো- মোম নাকি ভাণু
তাকেই জোছনা ভেবে যে পেতেছে জানু

সে বড় ভ্রমের চিহ্ন- বিবাহিত রাত
বিস্ময় আনিল স্বয়ং স্তনে প্রভাত

আমার স্বভাব ব্রাত্য, অভাবের তরে
চরণে মুদ্রিত মেধা- ধুলোর শহরে

এ বড় ভ্রমের শীর্ষ- কারুপণ্য পাপ
হঠাৎ হাওয়ার ফণা, চুমু দেয় সাপ

সর্পস্থ পঙক্তি ছুঁয়ে উড়ছে ফড়িঙ
বিদুরতা থেকে লিখি- মৃত বহুদিন...

মৃত এ হরিৎ হাওয়া- মৃত বালুভূমি
যে কোন জন্মের পাশে মৃত আমি তুমি

লিপিকৌশল

লিপিকৌশলে জানা হল আজ
মাইল মাইল দূরে
টুকরো আয়না
জোড়া-ডানা পেয়ে
বিশ্রম্ভে যায় উড়ে...

অথচ কাহিনী চিত্রিত এই দিনে আমি ঠিকই বয়ে যাই আর
অনীহামুখর পৃষ্ঠা উড়িয়ে বাক্যহীন ধূলিচন্দনে নন্দনে
উদ্বৃতির উধাও প্রান্তিকে একা, আলপথে
ক্রন্দন-আসন্ন যত গান ছুঁয়ে থাকি-
বলো, অক্ষরপূর্বক অগ্নি হয়তো পাঠাতে পারিনি
তোমাদের খড়োঘরে...

আর তুমি এতটাই চৈত্রে রচিত হাওয়া
যে- আমি এখনও ঋতুভেদ শিখিনি আহা
কখন বৃষ্টি... কখন শেফালি ঝরে?

ফলে, ছোবল জেনেছি, বৃষ্টি নিপুণ পারমাণবিক ফোটা
যে কোনও লাবণ্য (ফুলে প্রামাণ্য)
তাড়িত রোদের কণা,
আর আমি দূর বনে লুকনো সবুজ শিশু
বর্ণের অজ্ঞাতে যত মরাঝরাপাতা গ্রহণের দায়ে
অধ্যয়নে অপারগ আজও মর্মর কুড়িয়ে ফিরি-
বলো, পঙক্তিপূর্বক মুদ্রা হয়তো পাঠাতে পারিনি
তোমাদের বিপণিতে...

আর তুমি এতটাই বিজ্ঞাপন- নির্মিতঅধরা
যে- আমি এ বনের শাখাপ্রশাখায় হাওয়াতে হরণ, হরা-
তাই কুণ্ঠিত, থাকি স্বর-ব্যঞ্জনহীন
না-লেখালেখিতে...

অসহায়ত্ব

কমা দাঁড়ি কোলন সভায়
আমাকে ডাকলে বৃথা
আশ্চর্য জিজ্ঞাসা!
ওহে যতিমোড়লের ছানা

আজ আমি আরও পেছনে রেখে যাব ঘরবাড়ি
আজ আমি চিনব না তবু দেখব- না দেখা অপর!
ওই যে মেয়েটি- দাঁতের উপরে দাঁত
ওর বাম হাত
নেই কেন?
প্রৌঢ়াবাড়ির একলা মানুষ অমন তাকাল
দ্যাখো
অ্যালবাম ভর্তি ভোর...

যদিও সন্ধ্যা যদিও বর্ষা যদিও এখনও
বকশিকারিরা ফিরেও যায়নি ঘরে

আর আমি শুধু যেতে চাওয়া আর প্রেতে পাওয়া
এক প্রকার শরীরী হাওয়া
মুহূর্তে নিহিত অতীত-
একটু না হয় দেখতে এলাম উনুনের পাশে শীত...

এইটুকু দাও ভৌগলিকী, সার্বভৌম ক্ষতি
আমাকে কেন ডাকলে বৃথা
যত্রতত্র
গোত্রপতি যতি?

স্বীকারোক্তি

আদর্শ নদীর কাছে সমর্পণ শিখতে এসেছি!

ইতিপূর্বে, নদীমাত্র জলভ্রমে ডুবতে ডুবতে
এতবার আর্দ্র হল গান, এত পৃষ্ঠা গেল উড়ে
আমি ঠিক বোঝাতে পারার আগেই বোকা হয়ে যাই...

অতএব, আবিষ্কার আমাকে এড়িয়ে গেছে, দূরে-
সন্তরণ, দূরে-প্রান্তরণ, দূরে-ঠাকরুণ ঢেউ,
কিন্তু আমার গমন হাওয়া এমন কেন হল?
বক্ররেখাকে আমার বাসনা কে জানিয়ে দিল?

যেখানে বিস্ময় বিবসনা বুক নিয়ে দাঁড়িয়েছে,
সঙ্গত আমার ব্যস্তভাব; অমনি তাকালো গ্রন্থ
বিধি বক্রসকল... ফলে, খাদে পড়ে গিয়ে দেখি
আমারই বীর্যের ক্বাথে হ্রস্ব ড্রেন পরিব্যাপ্ত বটে;

আর লিপি-উদ্ভাবক, একটি কবিতা-সৃষ্ট শ্লাঘা
নিয়ে ঘুমোতে গেলেও, আর আমি ক্রমাগত কবি
হয়ে উঠতে উঠতে নদী অন্বেষণ... সমর্পণ
ইত্যাদি শব্দের জন্যে জলভ্রমে ড্রেনে ভেসে যাচ্ছি...

Thursday, August 13, 2009

নিদ্রাপ্রহরা

এরকম ঠিক নয়, এ তো আমি চাইনি বোঝাতে
তোমার আঙুলে আমি ঈশ্বর দেখেছি কালরাতে
-শঙ্খ ঘোষ
অপারগতায়ও কি কি পারা যায়? যা জানে ডায়েরি
লঞ্চ ছেড়ে গেলেই বুঝেছি কাকে বলে দূর... দেরি-

এ রকম ঠিক নয়, এ তো আমি চাইনি বোঝাতে
হয়তো ব্যয়িত হবার কথা ছিল অন্য কোনো খাতে

তাহলে যে ধর্ম-সংকট? নিদ্রাপ্রহরা দিতে
দুরূহ রাতের গল্প লিখে রাখি প্রতিপৃথিবীতে

অর্তাৎ এই জলের সূত্র- এই যে ভৌগলিকী
খেলতে খেলতে কবে হারিয়ে ফেলেছি সিকি...

তুমিও সিকির মতো- সিকিসূত্রে গড়িয়েছে কবে...
এপথে ওপথে খুঁজে আমি যাই সপ্তঋষিভবে

এসব অপারগতা; যবে ঘরে ফিরে এঁটে দিই খিল
নিদ্রাপ্রহরা দিতে ওড়ে পাতা পাতা স্লিপিং পিল...

চিরকালীন

কে কত প্রতিভা কুড়োবে
প্রতিদিন মেধার কুহকে?
কে কত প্রতিভা ফোটাবে আজ
শষ্পে ও সমুদ্রে?- জানি
এখনও ভোরের গল্পে উল্লেখ্য শিশির...

সংগোপনে সব হবে শুধু সংসার হবে না!

বাঙলা কবিতা মুখ্য
গীতি বেদনায়
প্রতিভা পীড়িত করে তুমি পাঠ্য মর্মের পঙক্তি...
পথের সামান্য ধুলো
কিছু নয়
তবু তৃণ হীনগান
শরণার্থী স্মৃতিগুলো-
অক্ষরে অক্ষরে শব্দ হয়... বাক্য হয়... বিলাপে বিলাপে

তোমার মহিমা এই
দিনে দিনে
পাঠ্য হয়ে পূর্ণ তুমি বিভিন্ন বালিশে!- তবু
তখনও সন্ধ্যার বাঁধে নির্জন মাধুরি!...
বিম্বিত বিদুর

মনে রাখি, তুঁ হুঁ মম...

পরস্পর

০১.
কে জানিত, নদীও আমার মতো
অপমানিত হবে?

ছিলে জল, পাত্রে পাত্রে ঘুরে
নদীবিনোদিনী- দর্শক এলই বুকে
ঢেউ তুলে লাবণ্য দেখাও...

আমিও পিতার মতো- আমিও পুরুষ
ঝাঁপিয়ে পড়েছি জলে, নদীতে আমার নাম
লিখে যদি আখ্যান হওয়া যায়...

কী আশ্চর্য! নদী থেকে উঠে এলে আজ
যেহেতু ডেকেছে পাথর, প্রেমিকসুলভ চোখে
এ মনোময় নগরকোঠার দিন...

০২.
পাত্রে পাত্রে ঘোরে তাই শাস্ত্রমতে
নদী তাকে দিয়েছিল জলের সম্ভ্রম,
নদী তাকে বলেছিল- পিঠেপিঠি বোন

যেহেতু পিতার মতো- আমিও এখন
মরুভূমি ভালোবাসি! হে তৃষ্ণাহীন হে তাঁতার, তবে
কে জানিত একদিন, নদীও আমার মতো
অপমানিত হবে?

০৩.
জল-অঙ্গে যে কাহিনী লেখা আজও মাতৃ-স্ত্রী কূলে
ফুলে উঠছে, ফুলে...

রোমন্থন

হুমায়ুন কবির- মনে আছে উড়নচণ্ডির মাঠে গোধূলিবাল্যের দিন?
ও বাড়ি, চলো বেড়াতে যাই
বাইরে ব্যাপক দিন-
পুস্তক থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বর্ণমালার ফড়িঙ...

ঘুমিয়ে ছিল যা যযাতি গল্প
মলাটে দেবীত্ব... অদূরে পন্নগ... ইত্যাদি প্রবাহ
অর্থাৎ এই দেহেই জমেছে শ্রেষ্ঠতম যা দাহ

তাহলে চলো না ও বাড়ি
আজকে
বেড়াতে বেরোই মাঠে!
ওই তো যেখানে নীলচে নোঙর ঘাটে...

ওখানে লিখব চাকার জীবনী
চরৈবতি ও
দূর দূর মহাদেশ-
এখনও উড়ছে সেই সাইকেল... রুগ্ন, ভগ্নাবশেষ...

নিদ্রাহীনতার গান

পরিভ্রমণের শেষে লিখি এই লুপ্ত দিনলিপি!

পুষ্পের আড়ালে পরাগপন্থি ভোর
শাড়ি শুকোবার অপরাহ্নে
আর কী কী ভেজা ছিল-
উচ্চজ্ঞানে মৌন হয় সন্ধ্যার তাৎপর্য...

কেননা, আয়না-নগরে যেতে যেতে মনে পড়ল
আমি কিছু স্বপ্ন এবং মুদ্রা তো ফেলে এসেছি-
পরন্তু, দ্বিতীয় যন্ত্রণার জন্য আমি কোনো
শাড়িও খুলিনি!
অতএব সংক্রমণযোগ্য এই ফেরার পিপাসা...

পরিত্যক্ত রাজবাড়িতে আজ কি কি আছে...?
শ্যাওলার মতোন স্মৃতিজল কেবলই সুদূর...?
কখন আমি সেই কয়েকটি অক্ষর শেষবার দেখেছি-

এসব ভাবতে ভাবতে এই ভাঙাপূর্ণিমায়
সার্বভৌম হয়ে উঠছে নিদ্রাহীনতার গান...

মর্মান্বেষীলিপি

নজরুল কবীর; একা যে অনেক দূরের চূড়ো- বন্ধু
যে সব জলের পাখি
বিব্রত; করে
বিলে যেতে অনীহা প্রকাশ-
লুকোনো কলস ভেঙে
তাকে দিই
অশ্রু প্রলোভন
আর
ডিঙিঢেউ, দ্যাখো আমি শিখেছি কম্পন...

আর যাকে ভস্ম বলে শীর্ষগান করি
ও মূর্ছিত পুত্ররা
শোনো, যে কোনো বনের নিদ্রা ভেঙে দূর পল্লবকীর্তন
যদি ভেসে ভেসে আসে
আর
এ সবুজ শষ্পে লুপ্ত তীর্থের সন্ধানে
ও অনতিতরুণ মেঘ
প্রতত যন্ত্রণা থেকে কিছু মরাল উড়িয়ে ফের
আমি যদি ফিরে আসি
তবে কি দেখব বৃষ্টি, আর্দ্র ডানা?

কবি বলছেন- ‘নারীরা ফেরে না’

যেসব কাঠের ঘোড়া
কুণ্ঠিত;
অদূরে দাঁড়িয়ে দ্যাখো
ধুলোপ্রাণ পার্বণ-মেলায়
যদৃচ্ছা পরিধি ছিঁড়ে
তাকে দিই
অভ্র-বিসর্জন
আর
পোড়া চোখ, দ্যাখো আমি শিখেছি সাঁতার

আর যাকে অশ্রু বলে শীর্ষঢেউ বলো
পুরনো দিনের গান সব চিত্র রীতি শিখে
প্রতিকৃতি হয়ে উঠছে জলে; সেই
জলের পাখি,
যারা বিলে যেতে অনীহা প্রকাশ
করেছিল

আজ থই থই, ভাসমান!... লুকোনো কলস ভেঙে...

উদ্বৃত্ত প্রাণের গান

মাসুদ সেজান ও মীর মাসরুর জামান রনি; আবৃত্তিশিল্পীদ্বয়
আরও একটু দেখে নিতে নিতে নিভে এল পতেঙ্গা-অপেরা আর
আরও একটু রঙিন কাহিনী ধরতে ধরতে ধরে ফেললাম চাঁদ!
সমুদ্র বেশ মনে ধরেছিল- তাই, আমরা কেবলই যে যার
আর আমরা আরও একা একা আর একে অপরের খাদ!

পাহাড় পেরুলে যে বাঁকে বাসনা, অধরা ও কালের চৌকাঠ
আমরা কি ইমব্যালান্সড, যে কাষ্ঠ-পুষ্পে প্রণতি জানাতে চাই?
যে কোন উঠোন, ঘরবাড়ি ভেঙে করেছি নিপুণ মাঠ
মাঠের শিয়রে আকাশ যেহেতু আমাদের নীলগাই...

আরও একটু ছুঁয়ে যেতে যেতে ছুঁয়ে ফেললাম চূড়ো
আরও একটু পরেই পাহাড়, ভেঙে ধুলোময়- গুঁড়ো গুঁড়ো...

আরও

অন্তত গনী আদম জানে, একটি রাত ছিঁড়ে ছিঁড়ে কীভাবে অজস্র হয়
আরও চাইছি অঝোর আজ আরও চাইছি বাতাস
ও ধুলোমন স্বপ্নউঠোন দ্যাখো স্থানীয় আকাশ!
উধাও মাঠের সিঁথি ও ধু ধু, আকাশ তবু কী স্থানীয়
উদ্বৃত্ত সেই বাড়ি কি আছে, অমা হে আমাকে জানিও...

যেহেতু এখনও আমি আর অমা চাইছি ষড়ৈশ্বর্য
চাইছি ৯কার কাঠবিড়ালি ও বিস্মৃতিপ্রবণ ফর্দ!

আরও যে অঝোর ঘ্রাণ, অঙ্গজলে যাযাবর সাঁকো
ও ধুলোবন উড়ে যাওয়া সব খড়কুটো আজ ডাকো!

কেননা বহুকাল আগেই আমি লিখেছি যে কবিতা
জলে শুয়েছিল চাঁদ- অপবাদে হয়ে গেল চিতা!
আরও সেই স্কুল-ফ্রক কীভাবে যে হয়ে গেল শাড়ি
আমি আর অমা চাইছি অনঘ উদ্বৃত্ত নীলবাড়ি...

প্রতিবেশী মেঘ, মুরলি আবেগ- অগ্নিমন্ত বিভা
আরও চাইছি চিতা- চাঁদ মৃত, মৃত আলোর প্রতিভা...

Wednesday, August 12, 2009

চুড়িগান

ক.
গৃহিণীর চুড়িতে এ গল্পের বিস্তৃতি
চুড়িতে কিসের চিহ্ন? কবেকার স্মৃতি?

সে বার দুর্গার দিনে, মেলা থেকে কেনা
এই চুড়ি, কী কারণে এত বেশি চেনা
নাই বলি, তবু বিসর্জনের রাতে
চুড়ি হয়ে পৌঁছলাম চুড়িনীর হাতে...

আমার আত্মার ধর্ম- আশ্চর্য শিরীষে
যেতে পারি যন্ত্রণারও নাভিকেন্দ্রে মিশে।
পূর্বেও প্রমাণ আছে- মৃগশীর্ষ বনে
ছিলাম মরীচি পুত্র, আদিতে গোপনে
কখনও; আশ্বিন এলে কাশের কবিতা
ভালোবেসে ফিরে আসি, রক্ত-সংহিতা...

খ.
শাস্ত্রপাঠে গেল মন- মন গেল উড়ে
ঠাঁই বসে দেখি সব পথ ভবঘুরে

হঠাৎ ঘুমুতে যাব- ঘুম এক নারী
কেবল জাগিয়ে রাখে, সহিতে না পারি
এ বড় মৌন লড়াই, লগ্ন-মায়াপুরী
গল্পের শুরুতে ছিল গৃহিণীর চুড়ি...

গ.
তো, চুড়িও হয়েছি সেই চুড়িনীকে ছুঁতে
যেহেতু আত্মা শ্রাবণে- গিয়েছে মরুতে
চুড়িনীর হাতে ছিল স্রোতল তারিণী
আমার আত্মার পাশে বাজে রিনিঝিনি...

শীর্ষ সেই চুড়িগাণ, চুড়িঅন্তঃপুর
গৃহিণীর গ্রাম ছেড়ে পড়ে আছে শ্রীমতি গলিতে...

ঙ.
তবে কি চুড়িই মুখ্য? নাকি সেই হাত?
বদলে যা দিয়েছিল দৃশ্য... ধারাপাত?

মর্মতন্ত্রলিপি

ভুবনের মেয়েগুলি ইশকুলে যায়!
শেখে, না শেখায় তারা হারে, না হারায়?

তাদের কি গ্রন্থ আছে নাকি গ্রন্থ নিজে?
শ্রাবণে লুকিয়ে ওমাঃ চৈত্রে যায় ভিজে!

ভুবনের মেয়েগুলি সাঁঝের প্রদীপ!
তাদের কপালে চায় প্রাণবন্ত টিপ!
আরো চায় ছুরি ব্লেড রক্ত-মেঘ-ছবি!
সন্ধ্যাবনে জুনিপোকা পুড়ে পুড়ে কবি!

কবিতা কি চায় কেহ চাওয়া যে পালালো
কবেকার কবি আজও সন্ধ্যাবনে আলো!

আছে বাক্য বেদমন্ত্র বেদেনী কলাপ
মনসার গর্ভে ছিল বিষ; বাস্তুসাপ!

সেসব সাপের কাছে লখিন্দর ঋণী!
বেহুলা হৃদয়-শীর্ষ ভুবনমোহিনী!

মোহিনীর এত কথা কাব্যে, কৌতূহলে!
কবেকার কবি আজও সন্ধ্যাবনে জ্বলে!

জন্মান্ধকাহিনী

আর ওই উঁইপোকাদের কথা
লিখি- আর ওই জন্মান্ধজর্জর
জীবনযাপন
নাশপ্রিয় ছোট পাখি...

আমি ওই পোকাদের প্রেম- আর
ওই পাখিদের প্রজ্ঞা
প্রতিভাত করি এই ভূর্জপত্রে

তবু পৃথিবীর পূণ্য গল্পগুলো
ঘুমিয়ে পড়েছে ধু ধু
তীব্র অভিমানে...

কেন ওই উঁইপোকাদের কথা
লিখি- আর ওই জন্মান্ধকাহিনী
আমাকে অনাথ ভেবে
কী শেখায় শিল্পবৎ...?

মৌলপাঠ

এই বার্তা ফেরি করি মর্মরিত হলুদ পাতায়

কিছুই মৌলিক নয়, মগ্নতায় তবু
মৌলপাঠ করি কীরকম...

এই সন্ধ্যা... যদি লিখি এই লুপ্তসন্ধ্যার কাহিনী
‘কিছুই যাবে না ফেলা’; লোভনীয় তবু
ওই ঝরাপাতার জীবনী...

এই পাতা সহোদর- আর এই আত্মজ মর্মরে
মৌলপাঠ করি তবু
অনন্ত প্রশ্নের আজ
একটিই উত্তর:
জানি না, যথার্থ জানি না...

এই বার্তা ফেরি করি বনে বনে প্রস্থানসঙ্গীতে

Tuesday, August 11, 2009

দেবীজনিত

যেভাবে জলের গল্প লেখা হয় আজকাল, ঘুরে ঘুরে
জলক্রীড়া, ব্রীড়াঢেউ... জানো, জল কিন্তু মাল্টিওয়ে জানে

আর আমি বয়ে বয়ে- এই যে এসেছি
ললিপপ বিকেলের পাশে- অশ্রুযুগ
চুপ করে লাগিয়ে দিচ্ছে হাসি!

বাইরে ভীষণ রওয়ানা দিচ্ছে আমার মিথ্যে ডানা!
জানো, যেভাবে স্নানের কথা লেখা হয় আজকাল,
এতভাবে
আর আমি ডুবতে ডুবতে- এই যে ভেসেছি
সেনসেশন হাওয়ায়, শোনো-
এত যৌনপাত কবিতাকে ক্লান্ত করে...

আর কবিতাও বেঁকে বেঁকে বাঁক নিচ্ছে... বিস্তৃতিপ্রবণ
কেননা জলের গল্প আজ নদী-প্রকৌশলীও জানে!
ঐ যে যমুনা বাঁধ...

ফলে, তোমাকে লিখতে লিখতে এত বাক্য, তুমি জানোই না

দুর্বলতা

হাওয়া ভেঙে উঠে আসছে ঢেউ
এ যন্ত্রণা উসকে দিচ্ছে কেউ

কেউ থাকে, কেউ থাকে না
যেমন দেখিনি নদী- নদীটা তো চেনা

এ বড় দুর্বলতা- দূরের কাহিনী
আমি কিন্তু ধুলোতেই ধুলোকবিতা
ধুলোমন্ত্রে সাজিয়েছি ধুলোধর্মচিতা

এছাড়া অন্যান্য পাঠ- পাঠে ক্ষত, ভয়
ক্ষতকে বলেছি বরং সম্ভাবনাময়

সম্ভাব্য রয়েছে তবু আরও কিছু গান
মুহূর্তেই বয়ে গেল... ওঁ আবহমান

যেমন দেখিনি বাড়ি- বাড়িটা তো চিনি
এ বড় দুর্বলতা, দূরের কাহিনী...

শিশুবর

বিবাহ দিনেই যাত্রা, প্রসূতিসদনে- মানে
ডাকো পুরোহিত যাও ধাত্রীর সন্ধানে...

ডাকো পড়শি... শানাই-চন্দন... গ্রন্থপৃষ্ঠা ছিঁড়ে
এদেশে হবে না, তবে দূর প্রান্তের গৃহে-

প্রথম বিবাহ তোমার- সম্ভবা কুমারী!
স্বপ্নগ্রহণে
প্রত্নবীজে, রজঃস্বলায় তুমি
অহমশিকারি?

বলো পুরোহিত বলো ধাত্রী গোপনে পরস্পর
কুমারী স্বয়ম্বর-
রক্ত... সিঁদুরে
আঁতুড় ঘরেই

তোর শিশু তোর বর?

জন্মগাথা

পিতাকে পরম বলি- অন্তরীক্ষ তুমি মোর পিতা
একবারই ছুঁয়েছিলে কোমল মাটি-সংহিতা...
আর এই দৃশ্যান্তরে লোকচক্ষু আমাকে যা বলে-
দিগন্তে আমার জন্ম; দিগন্তেই থাকি দৃশ্যপলে!

হায়, লোকালয় থেকে শুধু ভেসে ভেসে আসে ঘ্রাণ
মানুষের? তাহলে মানুষ কীরকম? ভাসমান?
আর আমি প্রান্তপ্রাণ, অন্যকিছু? দিগন্তবসতি
নিয়ে এই পরিপ্রেক্ষিতের প্রজা... জন্মের আরতি
তবু রেখে যাই গোপনেষু গ্লানিমায়- অযথায়
কিছু কথা জানে মানুষেরা, ধুধু নীল ঐন্দ্রিলায়...

আমার কি দোষ বলো- আমি কেন পাতকে জড়াব?
আমার কি শুরু বলো- আমি কেন শেষ ছুঁয়ে যাব?
শুধু এই নীলবাড়ি... প্রান্তরের প্রভাষিত দিন
অথবা আশ্চর্য রাত- মুহূর্তের মর্মে বিলীন...

আর এই ধ্বনিগান, প্রবাহিত আবহগীতিকা
নিরবতা ভাষা করি! মৌনতার মায়াবী লিপিকা
তবে কেন প্রযত্নে রাখিব আমি? প্রতিবেশীহীন
এই জন্মগাথা... সৌজাত্য ভেঙে ফের দিগন্তে বিলীন...

তুলোবীজ বিষয়ক দ্বিতীয়বার

তুলোবীজ, এই ব্যাধের তর্পণে আজ মেঘের কুসুম, জলমন্ত্র
তাহলে শেখাও পুনর্জন্ম... ওড়াওড়ি, অঙ্কুরবাসনা
গোধূলিকল্যাণে হই ত্রিসীমা গ্রাহক...

প্রথমে বন্দনা করি বিপুলা বিষাদ
তা’পরে বন্দনা করি চিতাভস্মচাঁদ
বিবাহে বন্দনা করি ব্যূহ-বিসংবাদ
ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ে ঘোটকী প্রবাদ...

ঘরভর্তি ঘুমের কফিন, ও তুলোবীজ উড়ালজন্ম শেখাও

ডানাহীন পাখিপ্রাণে আরও সূত্র উড়ে যায় শহরের দিকে
তাই মনস্বী-সন্ধ্যায় আজ ডুবে ডুবে নিচুজল কাব, অথবা
চিৎকারে চিহ্নিত করে জানাব, ঐ যে বাথটাবে রক্ত-শিশু ভাসছে-

অথচ আম-অঁটির ভেঁপুতেও রক্তের প্রয়োজন ছিল...

তো বলি, জমায়িত মাস্কফ্লেবার সব রেখেই এসেছি
সার্কফোয়ারায়... শো-রুমে, দর্পণে দর্পণে... শ্রীমতি সভায়
প্রভূত প্রভায়...

রে শস্যমাঠ, আজ আমিও হয়েছি হরিৎ
ত্রিসীমা গ্রাহক
জলমন্ত্রে
হ্লাদিনী তর্পণে
আর গোধূলিকল্যাণে

তুলোবীজ, আমায় উড়ালজন্ম শেখাও

এই গল্প, এই গান

এ গানে আসন পাতা, দূরে পোতাশ্রয়
আর অন্তরা ছুঁতে ছুঁতে ভিড়ে গেলে স্রস্ত তরী
তারই ফাঁকে এই অণুকাল গল্পময়
না হলে কি আর জলে ফেলে দিই ব্যবহৃত বালিঘড়ি?

এবার গানের, গরিবি দানেই অন্যমনস্ক দিন
রশ্মিপ্রসূত যত ঢেউ আসে- ভায়োল্টে ভার্জিন...

আমি কি সম্ভব আছি? বিস্মরণের জলে স্নান
করে এসেছি কি! তাহলে যে, হাতে এই পূর্ববাহী বলপেন?
শুরুর সমীপে এসে কিনা ফিরে যাবে আজ এই গান?
যার জন্যে হাওয়াবিশ্বে অকাতর সিজোফ্রেন...

বরঞ্চ সন্ধান ভালো- কারণেরা ঘটনার কত কাছাকাছি
ভায়োলেট ভার্জিন আসে... এ বেলায় আমি কি সম্ভব আছি?

তা না হলে অশ্রুমাত্র নিয়ে এই শ্মশানের পাদদেশে
যে আগুন জলের পড়শি, যার জন্য ভ্রূণ-দাহ, কর্পূর-কাহিনী
লেগে থাকে, এই গান, স্রস্ত তরী... প্রতিরাতে, প্রতিদিনই

মুমূর্ষুকালীন

জল, তাকে আর উপাধি দিও না
প্রকাশ্যে গড়িয়ে যাবে-
বলো বেলাভূমি প্রশ্রয়ের ইতিহাস আজ বলো...

কৈবর্তের অতিথি আমি- ধুধু গবেষক
অন্তিকে জেনেছি এই
এক মুঠো বালিতেই লেখা থাকে উটের জীবনী...

তবু তো এসেছি- ঊষর মাড়িয়ে
মধ্যাহ্নের মহাকাল
আর এই নির্বাণের সামান্য খসড়া
নদী কেন- এক ফোঁটা অশ্রুকেও ডিঙোনো অসম্ভব!

যেহেতু জন্মমাত্র জল সাবালিকা হয়ে ওঠে
আর স্তন দেখিয়ে খুব রোপণ করে
প্রদীর্ঘ পিপাসা...

তবু আকাটের দিন- স্তোত্রে রঙিন, নির্মাণাধীন মল্লার
আমিও মুমূর্ষু বটে, ফলত অপার...
ও বেলাভূমি, কোনদিকে ঝুঁকে থাকো আজ
বলো, প্রশ্রয়ের ইতিহাসবিন্দু বলো-

ঊষর মাড়িয়ে দেখি দোলা, দেখি মায়াবিনী ঢেউ
জলে; অধিকন্তু জলে ছিল প্রাণ-

ও উপাধিপ্রবণ ও শীর্ষস্থানীয় ত্রাণ
তুমি যে কেউ...

জলপিপি, পরী

শিয়রে গল্পের ঘুম ভেঙে ভেঙে গেলে
ঘুমের স্বচ্ছতা নিয়ে দেখি ধান... কুলো,
এক একটি কবিতাও শুয়ে আছে... ধুলো!
শাদা পাতা হাওয়ামুখি, শাদা ডানা মেলে
যথার্থ গল্পের তীরে ফের ঘুম ভাঙে;
কথাযুগ ব্যর্থ হল, ব্যর্থ বাক্য, লিপি!
কেউ যা বলেনি, নির্জন এসব জানে!
আর- তুমিও তো একজন ও জলপিপি!!

তা না হলে মৎস্যহীন, উদ্ভাবিত জলে
এই যে দাঁড়িয়ে আছ- শিকারি এল না
তবু বাইসন ব্যবিলনপুঞ্জ ভেঙে
মনে করো অনুধ্যানে আজও সম্ভাবনা
রয়ে গেছে? ফলে, তোমাকেই নিই মেনে!
ও জলপিপি, লিপিচূড়া ভাঙে কোলাহলে!!

বরঙ ঘুমোতে যাই, শিয়রে সুদূর
শিশুরা খেরছে, গল্প ফুটছে, ফুটুক!
এই যে দ্যাখো- ডাঙায় জমল পুকুর;
পিপি’টা, তোমার ইচ্ছে মতোন জুটুক
হ্রদের ধারণা এক্ষুণি- দিই, তাকাও
প্রশ্নাতীত, এই পূর্ণ অভাঙা থাকাও

তাহলে কাগজে শিশুতরী হয়ে যাই?
শিয়রে গল্পের ঘুম, রাত্রিদের পরী
আয় আয় আয়...

গার্হস্থ্য-গ্রন্থিক

বিছানা বালিশ নেই
আকাশে তুলো...

ঘর বা ফরশা উঠোন
নেই শস্য কী দারুবন-
দূরের দেশের শিলা... অঙ্গীলাঃ চাই;
চেয়েছি দারুণ ভুলও!

অসম্ভব! অসম্ভব এই অঝোর বেলায়
তরুণ স্বপ্নগুলো-
বিছানা বালিশ নেই
আকাশে তুলো...

নিয়ত ভাঙছে ঘুম
এই ভূমিষ্ঠ মৌসুম
আহা ঘুম ভেঙে আজ
কাকে কাকে ফের চিনি!

কিছু যা জেনেছি
কথা ও কাহিনী,
কি ছিল করুণ গার্হস্থ্য-সাধ
কে আজ কাকে বা ছুঁলো?
বিছানা... বালিশ... তুলো...

ধূলিচন্দনে গাহি কীর্তন
বাস্তু-বাসনা উধাও যখন
পঙক্তি বিছিয়ে না হয় শোবো
হাওয়ায় উড়ছে ধুলো-

বিছানা বালিশ নেই
আকাশে তুলো...

শাদা কবিতা

শাকিল-রূপা; মনে আছে একটি স্বল্পদৈর্ঘ কবিতা? মান্না-চরু...
শাদা কাগজ উড়ে বেড়ায়- হাওয়ার মতো ওড়ে
অগত্যা চাঁদ জ্বলছে জ্বলুক, ও মাঠ কেন পোড়ে?

সমস্ত মাঠ শস্যহীনা বৃক্ষ যখন একা
একাকিত্বের অধিস্ঠান এই পদ্যপুরাণ লেখা...

সংকলিত সব কালো রাত- রাত্রি বড় ভার
চোখের নিচে আজ এ রাতের পুনর্ব্যবহার...

শাদা কাগজ উড়ে বেড়ায়- হাওয়ায় মিশে ওড়ে
হাওয়াকে আজ পড়তে পারো অপূর্ব অক্ষরে...

যা বলেছি শাদা হাওয়ায় যা আজ আমার বলা
পুরুষ কিনা পরমার্থেই প্রবল রজঃস্বলা?

যা লিখেছি শাদা হাওয়ায়, যা বলেছি কথা
কথার স্বরূপ গ্রন্থিত আজ অমর নিরবতা!

শাদা কাগজ উড়ে বেড়ায়- হাওয়ার মতো ওড়ে
হাওয়াতে আজ আমায় লিখি অদৃশ্য অক্ষরে-

পড়তে পারো; পড়ো না হয় প্রাদি-অন্তঃস্বরে

সাধুপাড়া, নদীতীরে বালুচর মর্মহেতু

অপার, তোমার গল্প শুনেছি অনেক
তুমি কি এখনও ঢেউ ক্রমানুপাতিক?

একটি পাতার পরে শুয়ে থাকা স্মৃতি
সেই পাতা উড়ে গেলে আমি পড়ে যাই!

পড়ি তো! রহস্য বটে ক্রিয়াকালহীন
স্মারক দাক্ষিণ্য চেয়ে আমিও বয়েসি?

এর জন্যে পাঠ্যকলা লিপি-জাদুকরী?
এর জন্যে বহু জল শিরোনামে বাঁকা?
এর জন্যে শিশুগণ বৃদ্ধদের কোলে?
এর জন্যে সারাদেহ বাকল বৃত্তিক?

ওরে ক্রম্য তথাগত ‘আমি’ ত্যক্ত ‘তুমি’
আত্মরতি লিখে রাখে নর ও গুপ্তনারী!

যেহেতু রহস্য আছে রহস্য প্রাচীন
আমি আর শাদা ছেলে তুমি তো রঙিন...

Sunday, August 9, 2009

ঝিলপাড় থেকে ফিরে

দৃশ্যত, এ অঞ্চলে এই প্রথম এসেছে জলপিপি
এর আগে তো বকের স্নেহেই উড়েছি নেমেছি ঝিলে,
এর আগে খুব পড়েছি রুগ্ন পুরনো পাণ্ডুলিপি
রূপান্তরের গল্প আসে হাওয়ায় চূড়োতে মিলে!

না হলে পিপি’টা, জল ছেড়ে কেন ডাঙায়...
একটু পরেই পথের প্রস্থে ঐতিহাসিক সাপ
ফণা তুলে থাকে- ফণারা মন্ত্র জানায়
প্রতিভার ডানা ওম দেয় কিছু পাপ...

কেননা পাপেই খুশি, যেহেতু পুষি- যত স্পর্ধার ছানা,
এই যে এক একটা আঙুল- জন্মেছে যেন একেকরকম কালে!
ফের আমার মুঠিতে এসে জোট বেঁধেছে, বিদগ্ধ মৃণালে;
ও জলপিপি- আমিও চিত্রধর্মে এঁকেছি পালক, হীনগুরুত্বের ডানা...

স্বীকারোক্তি

সেই থেকে যোগাযোগ! ফলে, তোমাকে বুঝতে
পারি মনে করে এই দ্যাখো
চায়ের বদলে আমি চুমুতেই বেশি উদ্বেলিত...

ঠোঁটের বাহানা নিয়ে কত বাক্য হল
অদ্যাবধি, চাঁদও নামল ধূলিপৃষ্ঠে,
আমি কলঙ্কিত হয়ে গেলাম!

অনুমান করি যোগাযোগ সঠিক ছিল না...

তা না হলে ধ্বনিপুত্র একদিন
চিত্রকন্যার ভূমিকায় অভিনীত হতে হতে
আমাকে ডাকল বাবা!- যদিও মাতৃত্বের ধারণায়
তোমাকে দ্যাখানো অসম্ভব যদি

তবে, ভাষা বড় ব্যর্থময়, কবিতা-নির্মাণে অনিচ্ছুক
দিনে দিনে অক্ষমতা রূপায়িত হয়...

প্রণয়জনিত

একদিন স্বপ্না একটি পাখির কথা বলেছিল! পাখিটি-না মৃত
আস্তে আস্তে বক্র শিখছে দৌড়
আস্তে আস্তে চক্র বাঁধছে দানা!
আস্তে আস্তে বিন্যাস্ত হাড়গোড়
আস্তে আস্তে উড়িয়ে দিচ্ছে ডানা

আস্তে আস্তে গপ্পো তুলছে হাই
আস্তে আস্তে গুপ্ত দিচ্ছে উঁকি,
আস্তে আস্তে সিদ্ধ প্রহরায়
মেয়েটি কিন্তু মন্ত্রে আগুনমুখি...

আস্তে আস্তে পত্র লিখছে পাতা
আস্তে আস্তে গোত্র বদল করি,
আস্তে আস্তে মুগ্ধ গানের খাতা
ছেলেটি ছিঁড়ছে; তার প্রয়োজন তরী...

লিপিপুত্র লিপিকন্যা

এই
লিপিবংশ
আজ দ্ব্যর্থময়-
তাই, রাত্রি নামছে
ভোর ভাসছে, কাঁপছে দূরত্ব...

তা না হলে, এত পাখি উড়ে গেল!
তোমাদের ঘুমগলি, তোমাকে জাগাল না-
তা না হলে পক্ষিচরে এত ডিম ফুটিয়েছে রোদ!
তোমাদের ছায়াগুলি, তোমাকে বলল না- ‘তুমি তমোহর’

ফলে, আজ যত শাপ গেঁথে গেঁথে মালিকা ছুঁড়েছি হাওয়ায়!
ও লিপিপুত্র ও লিপিকন্যা- উচ্চারণমাত্রই যদি ভস্মযুগ... অদ্য যদিবা হঠাৎ...
হঠাৎ একবার সেই হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল ধর্মগ্রন্থ, হঠাৎ ফিরে তাকাই ফিরে সেই
মেষপালকের পিছু থেকে, হঠাৎ হারিয়ে ফেলি বিহ্বলতা এই হাড় ভেঙে, হঠাৎ...

একবার, এখনও স্পষ্ট মনে আছে- ডাকবিভাগের দিকে যেই প্রেরণ করেছ
তুমি একটি ঐচ্ছিক জ্বর, বহুদূরে আঞ্চলিক রোদ জানে, হাঁটতে হাঁটতে
আমি খণ্ডহর চিত্র এঁকে ফেলি- তো ফালি ফালি জেব্রাগান, তাতে
শুশ্রূষার সব দৃষ্ট+অন্ত হয়ে গিয়েছিল একদিন, এই শতকের
শেষে; একবার শীত এল কাঁপতে কাঁপতে দেখে
বস্ত্রহীন হয়ে পড়ি, কেননা উষ্ণতা নিজে এসে
লিখেছিল উত্তাপের তাৎপর্যকাহিনী...

দ্যাখো- এই দ্ব্যর্থময় দ্যুতিগুলো
বিভাজন জানে, শোনো, ওরা
আমাদের কেউ নয় আজও...
তা না হলে, তুমি
প্লেটোর প্রতিভা
পড়, পড়ছো তো-
আর আমি
সেই...

খসড়াপ্রবণ

রহমান হেনরী অথবা হেনরী স্বপন; ওদের একটি ছেলে... একটি মেয়ে...
এই যে উড়ছি, পাখির খসড়া থেকে

এই প্রকারণ, খড়ের সন্ন্যাসে
চিত্রার্পিত
এক একটি দৃশ্যের বহর
গ্রহণের ঘ্রাণমত্ত আমি গোত্রহীন
বিবিধ নির্বাণ থেকে নত হয়ে আসছি-

আমাকে নিশ্চয় পড়শি বলাও পাপ?

যেহেতু উৎসর্গবর্গের মৌমাছিও সাময়িক শত্রুমুখি
বা বিস্ময়ের সব নদী
দ্বন্দ্বজলে
কলহপ্রবণ;
তাই প্রকাশে অযোগ্য মাঠ
মৌনতা রচিত
অন্তত এরকমও দেখা যায় (অসম্ভবে)

কবি ম্যাটাডোরে পরাজিত, প্রাক-মৃত্যুর আলোয়
উৎকলিত ছায়া কী উল্লসিত...

আমি কি নিপুণ দ্রষ্টব্য, ও বিনোদন ও বিমুগ্ধ গ্যালারি?

এই যে উড়ছি, পাখির খসড়া থেকে
এই প্রকৌশল, আত্মজ্ঞাপন ছবি
হয়তো ম্যুরাল, মেঘের খসড়া থেকে...

ফলত

ফলে, আমরা কিন্তু বিফলে কুড়োই ধুলো
এদিকে আসন্ন শীত, মেঘে রয়ে যায় তুলো

ফলে, আমরা কিন্তু বিরলে বেড়াতে যাই
ওদিকে বিশুষ্ক নদী, ডাকে- আয় আয় আয়

ফলে, আমরা কিন্তু অতলে জমাই ঋণ
যেহেতু ব্যর্থ, লিখে রাখি সিরিয়াস দিন

ফলে, আমরা কিন্তু প্রচলে ভাবুক, কবি
বোলপুরের রাস্তাই তো বলেছিলো- ‘ধুলো হবি’?

ফলে, আমরা কিন্তু বিফলে কুড়োই ধুলো
দ্যাখো না- পরম যত্নে সাজিয়ে রাখছি, ভুলও

Saturday, August 8, 2009

অক্ষরবিন্যাস

শুরু, তাকে শেষাবধি ঠেকাতে পারিনি! আর
ঈষৎ ঝাঁকুনি দিয়ে নেমে আসে উপসংহার

এই রৌদ্র নিয়ে যেতে চাই জিগীষাপ্রান্তরে-
ভেবেছি, কীভাবে ছেলেটি ফড়িঙের লেজে ওড়ে!

হঠাৎ হাওয়ার ফণা, তাতে গবেষণা রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছি আমি যিশুর পেরেকে

তাহলে?- তীরে বসে এই নদী পান করি-
কেননা, আমার ছিল না ডানা, ছিল না তরী

শুধু কিছু রেখা- ছিল তারা শীর্ণ, একা... অসহায়
অক্ষরের মতো, অক্ষরেরা মুগ্ধবৎ ছুঁয়েছে আমায়।

না, যেই ছোঁয়াটা হয়েছে শুরু- রেখাচক্রযান
অক্ষরের ‘এত শোভা এত রূপ এত হাসি গান’

হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে লেখা হয় উপসংহার! তখন
অক্ষরেরে বলি বউ, পিতামাতা, পিঠেপিঠি বোন...

সম্প্রদায়

এই যে অশেষ বাক্য
দিকে দিকে
মাঠময়
ধান বুনিবার ছলে
ছড়িয়ে দিলাম; এর কিন্তু অর্থ এই-
বিলুপ্তির তীরে আজও
কৃষিজীবী সম্প্রদায়
সকলে যায়নি...

কেননা, ভোরের প্রশ্রয় পেয়ে
একদল বকপাখি, ঋষি;
ঝিলের সন্ধানে গিয়ে
আসন্ন শীতের শর্ত
প্রস্তাব করেছে
এই সন্ধ্যা-
অঙ্কুরিত কুয়াশার ক্বাথে...

গ্রামান্তের সব নভো, দ্যাখো
ঘরবাড়ি তুচ্ছজ্ঞানে
উঠতি কুহকে দিব্য
পাঠায় সংকেত!
আর যারা সাম্প্রতিকী
পাড়াময় ঝিকিমিকি
শাড়িতে নতুন-
অন্ধ এক ভিখিরিকে
ভিক্ষা দিতে গিয়ে
ঝোলা ভরে বাক্য ভরে দেয়!

যদিও অনেক শব্দ
সেই বাক্যে বাকি ছিল, ফলে
যথার্থ নিজেকে দেখে
ছুঁয়ে ফেলি ছায়া
যেহেতু যেখানে থাকি, আরশিনগর...

ক্রমে যত প্রসঙ্গ জন্মেছে, জন্মায়
মনুমেন্ট মেঘ থকে
মৃদু-হাওয়া... গান
আমার পড়শি পর্ণ-
যত প্রব্রজ্যাকুটির
আমি কিন্তু লব্ধ করি ভাষা; নদীটির...

এদিকে আজও কিছু, ভিক্ষামার্গ
মাড়িয়ে মাড়িয়ে যাই!
ফলে, মাঠের মৌনতাজাত
পুরনো দুপুর
আলগোছে ধরে ফেলি
যে কোন রোদেই...

ওই যে আহিড়ি সভা, শ্রী শ্রী রীতি
কুলবংশ... কবন্ধউদ্ধৃতি-
আমি কিন্তু রপ্ত করি রঙিন বিস্মৃতি

কেননা, অসংখ্য দিন, আপামর ধুলো হয়ে
উড়ে গেছে উৎসের সমীপে
আমি তাকে সমীপেষু করি
দগ্ধ
পত্রে পত্রে
আর
ছত্রে ছত্রে
ছুটে আসে অনেক পাহাড়
এক শস্য-পাদদেশে...

আমি সে দেশস্থ কৃষক
ধান বুনিবার ছলে
মাঠময় আবাদিত;

যেহেতু আমার পুত্র- ধ্বনিত কন্যারা
দিকে দিকে
গুপ্ত
বাক্যসম্প্রদায়...

আর্তিলাপ

হাঁটছি, আমি আজও হেঁটেছি

যখন একটি হংস, এক
পৃথুলা রমণীকে দেখে গতি শিখছিল,
যখন দিঘিরা সব সংক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল
চৈত্রপটে;

হাঁটতে হাঁটতে আমি গোধূলিমঙ্গল তীর্থে
আবাবিল কিশোরীর,
লজ্জিত
রক্ত-কাপড় দেখে ফেলি...

বলো, এই দৃশ্য-পর্যটন
ঘুরিয়ে মারছে কেন?
আমাকেই?

আমি মার কাছে যাব
মা গো
তুমি আর ফ্রক পরবে না?
কখনও?

পরীর ডানা, ধানমর্ম

পরীর ডানা, এ বেলা মাটিতে নামো
আমি ধ্যানীমাঠ... উড়তে যাব না ফের-
এ যে ফিরে আসি- মাঠশেষে আমি গ্রামও...
এই বিবরণ-ই মোটামুটি আমাদের!

যেহেতু আমরা আমাকে কুড়োতে যাই;
আমি ধানীমাঠ, বৃষ্টিজলও জানে!
চালকুড়িগত-শিল্প শিখেছি তাই
পরীর ডানা গো, ডেকেছি অনুধ্যানে...

উড়তে যাব না, আল্পনা দেব এঁকে,
আল্পনা নয় চাল-কণা গুঁড়ো গুঁড়ো-
নাম লিখে দেব ডানা-সমীচীন থেকে
পঙক্তিগুলি যে বাতাসে বানায় চূড়ো...

উড়তে যাব না, ডানা-চূড়ো তবু লিখি?
তিনটি শালিক ‘তিনজন’ হয়ে দ্যাখে!
কোন রাতে যেন হারাল চাঁদের সিকি...
এই বিবরণ অন্য কবিও লেখে!

তাতে কী... লিখুক, লেখা হোক সব হুহু
চালকুড়িগান, গুঁড়ো গুঁড়ো হাহাকার
পরীর ডানায়- যা আঁকা স্বপ্নবহুল
শাদা দুধস্মৃতি, ধানশীষে উপহার...

আমি মাঠে মাঠে উড়তে যাব না ফের...
শুধু উড়ে যাক বাতাসে লুকানো বই!
এই বিবরণ-ই মোটামুটি কবিদের-
সবাই মানবে? থাকুক না দ্বন্দ্বই...

দূরে থাক দিন, রাত থাক আরও দূরে
এ কোন সময়? দুয়েন্দের অভিমান
বাঙলা কবিতায়? বিষণ্ন দুপুরে
পরীর ডানা, মাটিতে নামো! আমি ধান...

আমি ধান কীনা, কৃষি জ্ঞানে মাঠ জানে
মাঠতক আমি মগ্ন, উধাও... একা!
পঙক্তিগুলিও কৃষিজীবী মনেপ্রাণে-
এই বিবরণ-ই হয়নি... হয় না লেখা...

Friday, August 7, 2009

পাখি ও পতনের গল্প

অন্যান্য বলতে আজহার, সহিদ, পপি, সুজন- সাধুরা সম্প্রতি অবিভাজিত

পাখিকে আর যাই বলি বন্ধু তো বলা যায় না

কেননা আদিত্য আমার বন্ধু, ওর সঙ্গে লিপটন-তর্কের পর
উদয়ন ইশকুল থেকে উড়িষ্যায় কমপক্ষে তেরো বার গিয়েছি...

জহির কতটা জাগরণপ্রিয়- সেসব জেনেছি বঙ্গবন্ধু হলের আরক্তিম রুমে
শাওনের সঙ্গে সারারাত ভিজে ভিজে কুয়াশাভবনের দিকে যেতে তো পেরেছি...

অর্থাৎ আমার বন্ধুরা ছিল অনন্তপ্রয়াসী তবু হাকিমচত্বরে... অপরাজেয় বাঙলায়
ভাঁজ করা কবিতায় সারাদুপুরের অভিমান আর আগুনের উদ্যানে মিশিমিশি...

জানি, কালোজজের কালোগাউনে রক্ত লেগেছিল অথবা
গগাঁকে ডেকেছিল তাহিতির মেয়েরা- রূপম বিলাশ বাপ্পি অশোক আর
প্রকাশের সঙ্গে আরও যে অনুষঙ্গ এরকম একা একা মনে রেখে চলি:

ঘুমের কফিন ভেঙে একদিন বন্ধু হয় স্বপ্নাক্রান্ত লাশ- ও আকাশ
আমরা বেড়াতে গিয়ে আর ফিরি না আর জেনে নিই আর খুঁটে খাই
প্রকৃত মানুষের সুধা, শ্বাস
যেহেতু মানুষ মানে সেই বৃষ্টির সমান মনোজ্ঞ-পতনের অভিলাষ...

এখন, যখন রক্তাক্ত ব্লেডের দিন পেরিয়ে ক্যারাভানবাজারের দিকে
উড়িয়ে দিয়েছি প্রত্যাশার বিপরীত প্রাত্যহিকী-

উড়ে যাচ্ছে এরোপ্লেন, মুদ্রার পালক, পাখি পাখি আর পাখি
তবু পাখিকে আর যাই বলি বন্ধু তো বলা যায় না

কেননা বন্ধুরা জানে, একদিন আমারও ছিল একজোড়া জিগীষার ডানা...

শাদা কবিতা

মাহবুব কবির, আলফ্রেড খোকন, মুজিব ইরম, কামরুজ্জামান কামু- বন্ধুবন্দেতম

এবার, লিখে রাখছি বনভূমি, অথচ লোকালয়ে
আমার কোনো শেকড়ও নেই, ডানাও নেই... পাখি!
লিখে রাখছি দু’একটা দিন রৌদ্রবিহীন... দূরে
আমি যে এই বাড়িতে থাকি- বাড়িটা ভবঘুরে!

এবার, এঁকে রাখছি উলুখড় ও চৈত্রপারের হাওয়া
যা রয়েছে হাড়ের মজুদ... ও হ্যাঁ কাঠের প্রতিভা!
এঁকে রাখছি আসন্ন রাত বা উন্মাদ গলি-
গলির শেষে গল্প একা, সে যায় শহরতলি!

এবার, লিখে রাখছি ভ্রমাত্মকের দগ্ধ ইতিহাস
স্থানীয় আকাশ, অমর দিনাজপুরের মাঠে
মৃত জোছনা পড়ে আছে সম্ভাবনার পালে-
তাই লিখি এই টেবিলে- মানে, বৃক্ষের কঙ্কালে!

আর লেখা সেই শাদা কাগজ, হাওয়াতে যায় উড়ে
আমি যে এই বাড়িতে থাকি- বাড়িটা ভবঘুরে।

উদ্বৃত্ত প্রাণের গান

শাদা রাজহাঁস দেখে যে দাঁড়িয়ে ছিলাম গ্রামীণ স্বভাবে
পুবের জানালা দারিদ্ররেখার রোদে... পরন্তু
প্রাংশু বৃক্ষে বাবুইয়ের বাসা ঝুলছে
দেখতে দেখতে
আমি আরও দেখেছি- কখন কলসি উপচে
ছলকে পড়ল ভরাট দুপুর...

বার্তাবহ পাখিকেও অস্বীকার করি না আজ...

যেহেতু রঘুনাথপুরের দিকে ছুটে গেছে পড়শি শানাই
অন্তত রান্নাঘরের ঘ্রাণ তো পাঠায় চুলোর আগুন
তাই, দূরবর্তী মেঘকেও অকৃতজ্ঞ বলি না...

যেহেতু- আমাকে ছুঁড়েছি জলে; যখন
ছুঁড়েছি নিরিহ ঢিল...

অনেক দিনের মেঘ আর অনেক সন্ধ্যার হিমে
শাদা গন্ধরাজ কীভাবে উড়ছে...
জানো, এখানে একটা দিঘিও ছিল!
ছিল লাবণ্যের খ্যাতি, ছিল রাজহাঁস...

অন্তত পূর্ণিমা এলেই মনে পড়বে
প্রহরান্তের বৈসাদৃশ্য... বিচ্ছিন্ন পালক... মৃতগ্রাম!
অন্তত আমিই দেখতে থাকব জল... জোছনা... রঘুনাথপুর

পোড়ামেঘ, ভালোবেসে হয়েছি সিঁদুর...

অতিথি পাখির সঙ্গে

ক. গ্রস্তগান
দেখতে চেয়েছি এক দিব্য সকাল
ফড়িঙের মমি-মুগ্ধ ঘুড়ির কঙ্কাল

হাতের মুঠোয় আজি চাইছি দুপুর
শিলাবৃষ্টি... শীধুস্বপ্ন... প্রান্ত বহুদূর

চোখে সায়াহ্নের মেঘ- চিনেছি গোধূলি
আয় রাত্রি- বোন আয় ‘জুজুফুল’ তুলি

খ. তুমিরা
চলো, চলো ফের ফিরে আসি।
দ্যাখো, অন্ধদিন রাশি রাশি।

এসো, এসো একসাথে বিরোধিতা
করি আর গদ্যেই লিখি কবিতা-

যাও, যাও তুমি অবশিষ্ট যাও
যেদিকে আমার স্বপ্ন, কুসুমে ফোটাও

তুমি, ও তোমার পূরক তুমিরা প্রীত?
তাতে বিকশিত গান- আমি মূর্ছিত...

গ. শ্মশান + ফাল্গুনী রায় + মাতৃসদন
এই যে মাথায় বাবুইপুরের ভোর... পরপরই ইশকুল, ঘণ্টার দৌড়!
এই যে আঙুলে অঘ্রাণের খড়... আসন্ন শীতের পৃষ্ঠা, মৃত সহোদর!
এই যে পাঁজরে লোহা, কয়লা-ইঞ্জিন... রেলশাত্রে লেখা লাল, লালমাই দিন!
এই যে শূন্য, পণ্ড পর্যটন... ও ফাল্গুনী, শ্মশানের পাশে আজও মাতৃসদন!

এই হাওয়া তো উস্কানিমূলক... ফলে, হাওয়াতেই মৃত কিছু কথাবার্তা হোক!

ঘ. রোমন্থন
আজও প্রেম পাখিপন্থি... বনে উড্ডিন পত্রালি
তার সৎকারে আজ এই হাওয়া-ঘূর্ণন!

আজও ফুল, তার পাদদেশে রুগ্ন কোনও মালি!

আজও রাত্রি চিরে ছিঁড়ে চূর্ণ
দী পা লি দী পা লি

ঙ. উড়ালকাহিনী

-ও আমি এক মাঘদুপুরের গল্প ছিঁড়ে সোয়েটার বুনেছি
-ও আমি এক জ্যোতিষীকে বিশ্বাস করে মরতে যাইনি
-ও আমি এক নদীপূর্ণিমায় শ্মশানে দেখেছি কুন্দবন
-ও আমি এক শহুরে-শ্রাবণে আটকে গিয়েছি জাদুঘরে
-ও আমি এক বৈষণ্নের ধ্বনি-মাফলার পরেছি গলায়
-ও আমি এক দাহপত্রে লিখেছি লোহিত বর্ণ-অভিজ্ঞান
-ও আমি এক দৃশ্যারণ্যের মনুমেন্ট, ফের মিলিয়ে গিয়েছি
‘ও’ এই অক্ষরের পূর্বে এক ‘তুমি’- ত্রস্তবাসিনী পাখি:
পাখিই! না পরি?

আশ্চর্য! ডানা তো দেখাওনি।

Thursday, August 6, 2009

দ্বিজব্রজবুলি

তোকে তীর্থে রেখে এই যাত্রা- লুকায়িতা!
তো, কথা বললেই আজ অঝোর কবিতা

আর যদি না বলি- পরশু বলিনি
যেন শ্রাবণে বৃষ্টিও অবিরাম ঋণি
অন্তত আমার কাছে, আমি তীর্থযাত্রী
মানে তিরিশি কবিতা! বাঁক ভাঙা জল!
যেহেতু প্রহরা জানি, জানি মিরাকল!!

তাই, নিদ্রা থেকে এতদূর, আবাসিকী
প্রতিটি রাতের পৃষ্ঠা, চন্দ্রে ধিকিধিকি

ফলে, অমরতা অন্তর্বাস দেয় খুলে
আমি মুহূর্তের দাস, মনে রাখি ভুলে-
যে ভুলে আমার জন্ম (আমার কি দোষ)
শিকারিরা আমাকেই জানে খরগোশ...

অথচ ছিলাম গুপ্ত- ঝিলের হাওয়ায়
সেই থেকে বহুবক শাদা শাদা ভাই...

তারপর অগোচরে কত ভ্রূণবনে
উড়ে গেছে ঝরাগান মরা আন্তিগোনে!
তখন দুঃখিত বটে, পাড়া পাড়া ঘুরি
আমার নাড়ির ফুল করেছিল চুরি
যে পিতা- পুষ্পবিলাসী, মোরে হত্যাকারী!
শ্মশানে স্নাতক আমি- যথা দাহচারী...

চারণের গৃহজ্ঞানে রূপায়িত ধূলি
চরণে লিখিয়া যায় দ্বিজব্রজবুলি
এছাড়া মায়ের নামে মিস্ট্রি কিছু জানি
পরজন্মে রাধা যেন- বনমালি আমি!

সাক্ষাত রাধাই গুহ্যে, যৌগে বিরহিতা
তাকে ঘিরে যাহা বলি, তাহা তো কবিতা!
আর যদি নাই বলি- কাল তো বলিনি
কি বলিব বলো সেই না বলা কাহিনী...

এক সেই দুপুরের দিন ভেঙে চুরে
গাছে ঠোঁট লাগিয়েছি; যেহেতু গাঙুড়ে
ছিলাম তারও আগে কিছুকাল, তবে
লখিন্দর পুনঃপ্রাণে বনবাসী হবে
তা কি ধর্মে লেখা ছিল? তুমিই জানিতে
বলে আমাকে চিনেছো! তাই আচম্বিতে-
বনের পাতার স্তূপে অগ্নিমন্ত্র লিখে
গিয়েছিলে গ্রামান্তের লোকজ প্রান্তিকে...

এইমতো পোড়ে বন, আমি বনমালী
বনবাসী মন থেকে বিভস্ম পত্রালী-
আরও যা হরিৎ মর্ম, দগ্ধতন্ত্রে দাহ
মৌনতা চৌচির করে কাঠুরে-প্রবাহ!

তবু প্রশ্রয়ের লোভে, পরমার্থ-রাতে
নিশিন্দার নদীকূলে গিয়েছি বেড়াতে-
যদি কল্লোলের, যদি বাঁকভাঙা খাঁজে
যদি সেই তীর্থগান, নারীমাত্র বাজে-
তো বাজুক সখি, ও কিন্নরী ম্যাণ্ডেলিন;
দেখি তোমাদের বুকে দুটো আলপিন
কেবল ফুটিতে চায়, ফলে কবিজ্ঞানে
যে বাতাস অদৃশ্যত, তার যৌনধ্যানে
মস্ত সংকেত আসে... মৃত্যু-রচয়িতা!
সে কথা বললেই আজ অমর কবিতা...

আর আমি কবিতাকে, কবিতা আমাকে
মানে লিখি পরাজয়, মানে শোচনাকে
রেখেছি তবু শীর্ষ তোরণে; ভালোবেসে
যেনবা শিউলিতলা- দুধে যায় ভেসে...

কবি গোয়ালার ছেলে, শাদাসঙ্গপ্রিয়
সুদূরে মিলায় মুগ্ধ, মুরলিয়া-ক্ষীয়...
তীর্থের ভোরের পাখি, শব্দে ও ভাষায়
গোত্রহীন যত বার্তা, আর্তির আশাই
হয়তো বিফলে গেল, জন্ম বিফলিয়া-
পুরনো দিনে গান যেতেছে বহিয়া
ছিন্ন শ্রোত্রে ভিন্ন যত জিগীষাকে ভেঙে,
পিঁপিলিকা তোমাদের লাল-শিশুট্রেনে
নিজেকে ছাড়িয়ে আজও দৃষ্টান্তে বহো;
পাতার আড়ালে ছায়া- বস্তুত বিরহ
বহনে আমি অপূর্ব, কাব্যে অভিপ্রায়,
পাতা পাতা স্বপ্ন লিখে গেঁথেছি হাওয়ায়!

যেহেতু হাড়ের গল্প, হাওয়ার স্বরূপে!
অতএব তীর্থে রাখি জিনচক্রে তোকে...

তুই যে নদীর তীরে চিত্রার্পিত পাখি
ফলে, উড়োগান দেশে- সে দেশেই থাকি;
ফলে, যত ঘুম, যত বিছানা বালিশ
আকাশে উড়িয়া যায়, যেহেতু সালিশ
আমাকে শাসায় দাঁড়ালেই, কিন্তু ঘুম?
আমার ঘুমের ওমেই ফুটিছে কুসুম-
শিশুতোষ এ শহরে... বসন্ত অপার
নক্ষত্রে নির্মিত গৃহ, বিহঙ্গমল্লার!

ও নিদ্রিতা মেঘ, আজ পাবে না নিঝুম-
আমার ঘুমের দেশে পড়িয়াছে ধুম...

এই যে অনেক গল্প হল- সারাদিনে,
সূর্যাস্ত, প্রণতি নাও, বাক্যে, আরক্তিমে!
আলোর করুণা নিয়ে একটু পরেই
অনিঃশেষ হব, দগ্ধ হব জাতিস্মরে-

কিন্তু আমি ছাড়ব না জন্মগত ঢেউ
আমার মতোন আর আসে নাই কেউ
কিন্তু আমি ছাড়ব না ছায়া তবু তোকে
কেননা বিলুপ্তিহীন মারী ও মড়কে
এই যে রয়েছি আজও- গুপ্ত সম্ভাবনা!
এইবার আমি তোকে কণা ছাড়ব না...

ফুলগুলি ফণা তোলো, নাও সর্পবীজ
অকাতর নদীগুলি, অগ্নি হও প্লিজ!
সুচের সংজ্ঞা নে তুই অনুপুঙ্খ তৃণ
হেই রাত্রি, দীর্ঘমন্ত্রে, নে খেয়ে নে দিনও...

যথা বাক্য তথা বোধি, আজন্ম উন্মাদ
এই হচ্ছে অন্তরঙ্গ আনিঃসঙ্গবাদ!
এই গোত্রে দ্ব্যর্থ আমি। (এক) লুকায়িতা
তীর্থে তুমি ত্রাতা (দুই) অদৃশ্য কবিতা!

যেনবা নিজেরই সঙ্গ নিজে চুরি করে
এই যে পালিয়ে যাচ্ছি বাক্যে, গোত্রান্তরে-

মানে লিখি পরাজয়, শীর্ষ শোচনাকে...