Thursday, August 6, 2009

দ্বিজব্রজবুলি

তোকে তীর্থে রেখে এই যাত্রা- লুকায়িতা!
তো, কথা বললেই আজ অঝোর কবিতা

আর যদি না বলি- পরশু বলিনি
যেন শ্রাবণে বৃষ্টিও অবিরাম ঋণি
অন্তত আমার কাছে, আমি তীর্থযাত্রী
মানে তিরিশি কবিতা! বাঁক ভাঙা জল!
যেহেতু প্রহরা জানি, জানি মিরাকল!!

তাই, নিদ্রা থেকে এতদূর, আবাসিকী
প্রতিটি রাতের পৃষ্ঠা, চন্দ্রে ধিকিধিকি

ফলে, অমরতা অন্তর্বাস দেয় খুলে
আমি মুহূর্তের দাস, মনে রাখি ভুলে-
যে ভুলে আমার জন্ম (আমার কি দোষ)
শিকারিরা আমাকেই জানে খরগোশ...

অথচ ছিলাম গুপ্ত- ঝিলের হাওয়ায়
সেই থেকে বহুবক শাদা শাদা ভাই...

তারপর অগোচরে কত ভ্রূণবনে
উড়ে গেছে ঝরাগান মরা আন্তিগোনে!
তখন দুঃখিত বটে, পাড়া পাড়া ঘুরি
আমার নাড়ির ফুল করেছিল চুরি
যে পিতা- পুষ্পবিলাসী, মোরে হত্যাকারী!
শ্মশানে স্নাতক আমি- যথা দাহচারী...

চারণের গৃহজ্ঞানে রূপায়িত ধূলি
চরণে লিখিয়া যায় দ্বিজব্রজবুলি
এছাড়া মায়ের নামে মিস্ট্রি কিছু জানি
পরজন্মে রাধা যেন- বনমালি আমি!

সাক্ষাত রাধাই গুহ্যে, যৌগে বিরহিতা
তাকে ঘিরে যাহা বলি, তাহা তো কবিতা!
আর যদি নাই বলি- কাল তো বলিনি
কি বলিব বলো সেই না বলা কাহিনী...

এক সেই দুপুরের দিন ভেঙে চুরে
গাছে ঠোঁট লাগিয়েছি; যেহেতু গাঙুড়ে
ছিলাম তারও আগে কিছুকাল, তবে
লখিন্দর পুনঃপ্রাণে বনবাসী হবে
তা কি ধর্মে লেখা ছিল? তুমিই জানিতে
বলে আমাকে চিনেছো! তাই আচম্বিতে-
বনের পাতার স্তূপে অগ্নিমন্ত্র লিখে
গিয়েছিলে গ্রামান্তের লোকজ প্রান্তিকে...

এইমতো পোড়ে বন, আমি বনমালী
বনবাসী মন থেকে বিভস্ম পত্রালী-
আরও যা হরিৎ মর্ম, দগ্ধতন্ত্রে দাহ
মৌনতা চৌচির করে কাঠুরে-প্রবাহ!

তবু প্রশ্রয়ের লোভে, পরমার্থ-রাতে
নিশিন্দার নদীকূলে গিয়েছি বেড়াতে-
যদি কল্লোলের, যদি বাঁকভাঙা খাঁজে
যদি সেই তীর্থগান, নারীমাত্র বাজে-
তো বাজুক সখি, ও কিন্নরী ম্যাণ্ডেলিন;
দেখি তোমাদের বুকে দুটো আলপিন
কেবল ফুটিতে চায়, ফলে কবিজ্ঞানে
যে বাতাস অদৃশ্যত, তার যৌনধ্যানে
মস্ত সংকেত আসে... মৃত্যু-রচয়িতা!
সে কথা বললেই আজ অমর কবিতা...

আর আমি কবিতাকে, কবিতা আমাকে
মানে লিখি পরাজয়, মানে শোচনাকে
রেখেছি তবু শীর্ষ তোরণে; ভালোবেসে
যেনবা শিউলিতলা- দুধে যায় ভেসে...

কবি গোয়ালার ছেলে, শাদাসঙ্গপ্রিয়
সুদূরে মিলায় মুগ্ধ, মুরলিয়া-ক্ষীয়...
তীর্থের ভোরের পাখি, শব্দে ও ভাষায়
গোত্রহীন যত বার্তা, আর্তির আশাই
হয়তো বিফলে গেল, জন্ম বিফলিয়া-
পুরনো দিনে গান যেতেছে বহিয়া
ছিন্ন শ্রোত্রে ভিন্ন যত জিগীষাকে ভেঙে,
পিঁপিলিকা তোমাদের লাল-শিশুট্রেনে
নিজেকে ছাড়িয়ে আজও দৃষ্টান্তে বহো;
পাতার আড়ালে ছায়া- বস্তুত বিরহ
বহনে আমি অপূর্ব, কাব্যে অভিপ্রায়,
পাতা পাতা স্বপ্ন লিখে গেঁথেছি হাওয়ায়!

যেহেতু হাড়ের গল্প, হাওয়ার স্বরূপে!
অতএব তীর্থে রাখি জিনচক্রে তোকে...

তুই যে নদীর তীরে চিত্রার্পিত পাখি
ফলে, উড়োগান দেশে- সে দেশেই থাকি;
ফলে, যত ঘুম, যত বিছানা বালিশ
আকাশে উড়িয়া যায়, যেহেতু সালিশ
আমাকে শাসায় দাঁড়ালেই, কিন্তু ঘুম?
আমার ঘুমের ওমেই ফুটিছে কুসুম-
শিশুতোষ এ শহরে... বসন্ত অপার
নক্ষত্রে নির্মিত গৃহ, বিহঙ্গমল্লার!

ও নিদ্রিতা মেঘ, আজ পাবে না নিঝুম-
আমার ঘুমের দেশে পড়িয়াছে ধুম...

এই যে অনেক গল্প হল- সারাদিনে,
সূর্যাস্ত, প্রণতি নাও, বাক্যে, আরক্তিমে!
আলোর করুণা নিয়ে একটু পরেই
অনিঃশেষ হব, দগ্ধ হব জাতিস্মরে-

কিন্তু আমি ছাড়ব না জন্মগত ঢেউ
আমার মতোন আর আসে নাই কেউ
কিন্তু আমি ছাড়ব না ছায়া তবু তোকে
কেননা বিলুপ্তিহীন মারী ও মড়কে
এই যে রয়েছি আজও- গুপ্ত সম্ভাবনা!
এইবার আমি তোকে কণা ছাড়ব না...

ফুলগুলি ফণা তোলো, নাও সর্পবীজ
অকাতর নদীগুলি, অগ্নি হও প্লিজ!
সুচের সংজ্ঞা নে তুই অনুপুঙ্খ তৃণ
হেই রাত্রি, দীর্ঘমন্ত্রে, নে খেয়ে নে দিনও...

যথা বাক্য তথা বোধি, আজন্ম উন্মাদ
এই হচ্ছে অন্তরঙ্গ আনিঃসঙ্গবাদ!
এই গোত্রে দ্ব্যর্থ আমি। (এক) লুকায়িতা
তীর্থে তুমি ত্রাতা (দুই) অদৃশ্য কবিতা!

যেনবা নিজেরই সঙ্গ নিজে চুরি করে
এই যে পালিয়ে যাচ্ছি বাক্যে, গোত্রান্তরে-

মানে লিখি পরাজয়, শীর্ষ শোচনাকে...

1 comment: